লুটের টাকা আদায়ে শংকা

হলমার্কের লুটপাটের ২ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। সোনালী ব্যাংক আদালতে মামলা দায়েরের পর হলমার্কের রিটের কারণে এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বিপুল অংকের অর্থ লুটপাটের বিপরীতে মাত্র ৫০০ কোটি টাকার বন্ধকী সম্পত্তি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানান সোনালী ব্যাংকের এমডি। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে হলমার্কের লুটপাটের অর্থ আদায়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সোনালী ব্যাংকের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিতে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকের সুপারিশ সম্মিলিত কার্যবিবরণী সম্প্রতি জাতীয় সংসদ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সুপারিশে বলা হয়, হলমার্ক গ্রুপের লোপাটকৃত অর্থ আদায়, মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তি এবং এই গ্রুপের শিল্প কারখানাগুলোকে উৎপাদনে রাখার জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কার্যবিবরণীতে সোনালী ব্যাংকের এমডির বক্তব্য তুলে ধরা হয়। ব্যাংকের এমডি তার বক্তব্যে বলেছেন, হলমার্কসহ আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকে আর্থিক অনিয়ম ঘটিয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের ২ হাজার ৯৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ। সোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেংকারির মধ্যে ঘটনাটি সর্ববৃহৎ। টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ হলমার্কের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি আদালতে রিট করায় টাকা আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। তবে নন-ফান্ডেড ঋণ সম্পর্কিত বিষয়াদি সমাধানের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, হলমার্ক কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি এবং একজন ডিএমডি পলাতক আছেন। অপর একজন ডিএমডি গ্রেফতার অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন।
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে হলমার্কের ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের দায়, হলমার্কের বন্ধকী সম্পত্তির পরিমাণ, আদায়কৃত অর্থ এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে অবশিষ্ট আদায়ের সম্ভাব্য পরিমাণের ব্যাপারে তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, হলমার্কের অনিয়মের সঙ্গে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা সম্পৃক্ত। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের মাত্র ৫০০ কোটি টাকা বন্ধকী সম্পত্তি হিসেবে ব্যাংকে রয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে হলমার্ক গ্রুপের দেনার বিপরীতে ৬ হাজার ১১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি মর্টগেজ গ্রহণ করা হয়। ব্যাংক কর্তৃক নিরূপিত ওই জমির মূল্য হচ্ছে ৩৮৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বন্ধকের জন্য মূল দলিল ও সার্টিফাইড দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মূল্য ব্যাংক কর্তৃক নিরূপন করা হয়েছিল ৭৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু নতুনভাবে ব্যাংক জানাচ্ছে বন্ধকীর পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা।
এদিকে হলমার্কের শিল্প কারখানাগুলো চালু রাখার ব্যাপারে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। জানা গেছে, হলমার্ক গ্রুপে ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করতো।
সম্পদের প্রকৃত তথ্য গোপন : জানা গেছে, হলমার্ক গ্রুপ ব্যাংক থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থের মধ্যে ১ হাজার ৭০৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা হচ্ছে ফান্ডেড দায় এবং ৮৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা হচ্ছে নন-ফান্ডেড দায়। এদিকে হলমার্কের মোট সম্পত্তির মূল্য হচ্ছে ১ হাজার ১৭০ কোটি টাকা, যা সোনালী ব্যাংক নিরূপন করেছে। কিন্তু হলমার্কের পক্ষ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয়। তা দেখিয়ে ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় বিপুল অংকের টাকা। হলমার্কের ওপর তৈরি করা সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের কাছে হলমার্কের মোট দায় ২ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১ হাজার ৭০৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা হচ্ছে ফান্ডেড দায় এবং ৮৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা হচ্ছে নন-ফান্ডেড দায়। হলমার্ক গ্র“প এই দায় সৃষ্টির পেছনে বিভিন্ন রকমের ত্র“টি-বিচ্যুতি, নিয়মের ব্যত্যয় ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্রের ঘাটতি দেখা গেছে। তবে সর্বশেষ দেনার স্থিতি হচ্ছে ২ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বৈধ ঋণ হিসাবে বিবেচনা করা যায়। বাকি ২ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে। জালিয়াতি করে নেয়া ফান্ডেড দেনার মধ্যে ভুয়া প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা স্পিনিং মিলস এবং ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের আইবিপি দায় ৯৯৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.