কাশ্মীরি মন জিততে কৌশলী বিজেপি

জম্মুতে এক সভায় মোদি
কাশ্মীর জয়ে ‘মিশন-৪৪’ সফল করার এমনই তাগিদ যে, বিজেপি বেমালুম চেপে গেল সংবিধানের আলোচিত ৩৭০ ধারাকে। অথচ ভারতীয় সংবিধান থেকে এই ধারা মুছে ফেলার জন্য বিজেপি বহুদিন ধরেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাজ্যের উধমপুরে গতকাল শুক্রবার বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ৩৭০ নিয়ে বিতর্কের ধারকাছ দিয়ে না হেঁটে জানালেন, রাজ্যকে দুই পরিবারের (আবদুল্লাহ ও সাঈদ) ‘হাত থেকে’ মুক্ত করে উন্নয়নের রাস্তায় দাঁড় করানোই তাঁর একমাত্র কাজ। জম্মু-কাশ্মীরের শেষ রাজা হিন্দু ছিলেন। তবে ভারতভুক্তির পর থেকে এযাবৎ কখনো কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হননি। প্রসঙ্গত, কাশ্মীর ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর দলীয় সভাপতি অমিত শাহ একজন হিন্দুকে মুখ্যমন্ত্রী করার স্বপ্ন দেখছেন। এই স্বপ্নকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ। মোদি ঘোষণা করেছেন তাঁর ‘মিশন-৪৪’, যার অর্থ, ৮৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে অন্তত ৪৪টি জিতে তাঁরা সরকার গড়বেন। সেই তাগিদে তাঁরা রাজ্যের জন্য তৈরি ‘ভিশন ডকুমেন্ট’-এ বিতর্কিত ৩৭০ ধারার উল্লেখই করলেন না। সংবিধানের ৩৭০ ধারা জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।
বিজেপি মনে করে, কাশ্মীরের জনগণকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে সাহায্য করছে এই ধারা। বিজেপি, কিংবা তারও আগে ভারতীয় জন সংঘকে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো থেকে যে তিনটি নীতি পৃথক করে রেখেছিল, সেগুলোর অন্যতম এই ৩৭০ ধারা। বাকি দুটি, সারা দেশের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন ও অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা। ৩৭০ ধারা বিলোপের অঙ্গীকার করেই বিজেপি এত দিন এই রাজ্যের প্রতিটি ভোটে লড়েছে। জম্মুতে প্রভাব বাড়িয়েছে। কিন্তু মুসলিমপ্রধান কাশ্মীর উপত্যকায় একটি আসনও কখনো জেতেনি। মোদি বিলক্ষণ জানেন, জম্মুর ৩৭টি এবং লাদাখের চারটি আসনের সব কটি জিতলেও ‘মিশন-৪৪’ সার্থক হবে না। দরকার হবে উপত্যকার ৪৬টি আসনের অন্তত তিনটি। ৩৭০ ধারা অনুচ্চারিত রেখে মোদি তাই উপত্যকার মানুষদের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। উধমপুরে তিনি ও শ্রীনগরে তাঁর দলের সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব বলেছেন, ৩৭০ ধারার চেয়েও এ মুহূর্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের মানুষকে উন্নয়নের জোয়ারে টেনে আনা। কাশ্মীর দখলে মোদির আগ্রাসী মনোভাব উপত্যকার রাজনীতিকদের অন্য মেরুকরণেও অনুঘটকের কাজ করছে। নির্বাচনী প্রচারে ৩৭০ ধারা অনুচ্চারিত থাকা যতটা চমক, ততটাই চমক উপত্যকায় ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর’-এর পরেই প্রায় একনিঃশ্বাসে ‘নরেন্দ্র মোদি জিন্দাবাদ’ স্লোগান। দুটিই অভূতপূর্ব।

No comments

Powered by Blogger.