নগর পরিকল্পনায় ভুল : রাজউক টাকা কামানোতে ব্যস্ত

হাসিমুখে আত্মসমালোচনায় মুখর হলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। শনিবার জনস্বার্থে গৃহনির্মাণ শীর্ষক আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তার অধঃস্তন প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, আমাদের নগর পরিকল্পনায় ভুল ছিল। কর্মকাণ্ডেও দীর্ঘসূত্রতা আছে। জমি, প্লট, ফ্ল্যাট নিয়েও অনেক কথা শোনা যায়। অবস্থা দেখে মনে হয় রাজউকের কোনো কাজ নেই। তারা শুধু টাকা কমাতে ব্যস্ত।
রাজধানীর মতিঝিলের ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ রাজউকের সমালোচনা করে আরও বলেন, রাজধানীর অবকাঠামো উন্নয়নে পরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের অভাব রয়েছে রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ কারণে ঢাকা ও আশপাশে পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হয়নি। আমরা নগরপরিকল্পনাবিদরা এ শহরের মধ্যেই ট্যানারি ও গার্মেন্ট শিল্প নির্মাণ করেছি। যার বর্জ্য গিয়ে পড়ছে বুড়িগঙ্গাসহ অনেক নদীতে। ফলে নদী দূষিত হয়ে নগরী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। যদি প্রকৌশলীরা কারখানাগুলোতে ইটিপির ব্যবস্থা করতেন, তবে এ সমস্যা হতো না।
এসব প্রতিষ্ঠানে আগে যারা নগরপরিকল্পনাবিদ ছিলেন তারা এ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে পরিকল্পনা করেননি। ওই সময় তাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে, ভবিষ্যতে ঢাকা কতটুকু সম্প্রসারিত হবে। তাই শহরের আজ এ অবস্থা। তিনি এ সময় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, এসব দেশের নগরায়ন হয়েছে ৬০০ বছরের পরিকল্পনা করে। তাই ওইসব দেশের শহরগুলো অনেক সুন্দর।
তবে আশার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, লন্ডনের টেমস নদীর অবস্থাও আমাদের দেশের মতো ছিল। কিন্তু তারা সেখান থেকে নদীকে রক্ষা করতে পেরেছে। আমরাও আশা করছি, অচিরেই নদী দূষণমুক্ত করতে পারব। সেমিনারে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আবাসন খাতের ভূমিকা এবং এ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি সদস্য ও অর্থনীতিবিদ ড. নুরুল আমিন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার জিএম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম এবং রিহ্যাবের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে গণপূর্তমন্ত্রী নগরীর আবাসন সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, ঋণের উচ্চ সুদের হারের কারণেই আবাসন খাতে রেডিমেট ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ফ্ল্যাট কেনার জন্য গ্রাহকদের মাত্র ৩ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হলেও আমাদের দেশে ঋণের সুদের হার অনেক বেশি। এই উচ্চ সুদের কারণেই অনেকে ব্যাংক ঋণ নিতে সাহস পান না। এর ফলে অনেকেই শত চেষ্টার পরেও ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। আবার একই কারণে রাজধানীতে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারছেন না। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গরিব ও মধ্যবিত্তদের ঋণ দিলে সেটা কখনও খোয়া যায় না। তাদের ঋণ দিলে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, যুবক, ডেসটিনির মতো হবে না। কারণ, তারা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেন।

No comments

Powered by Blogger.