পরীক্ষা দিলো বগুড়ার সেই কিশোর

অবশেষে সিজান জেডিসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেলো। দৈনিক মানবজমিন-এ ‘প্রধানমন্ত্রী খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন’- এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর বগুড়ার কাহালুর শীতলাই গ্রামে মাদরাসা ছাত্র সিজান জামিনে মুক্তি পেয়েছে। মুক্তি পেলেও খুশি নয় সে। তার পিতা শুকুর আলীসহ সে মুক্তি চায় মামলা থেকে। চোখ-মুখে দুশ্চিন্তা ও হতাশা নিয়ে তবুও সে পরীক্ষা দিচ্ছে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে নিয়ে কটূক্তি এবং কথাবার্তা মোবাইলে অন্যদের শোনানোর অভিযোগে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে গত ১৭ই অক্টোবর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তাকে পাঠানো হয় যশোর শিশু অপরাধী সংশোধনাগারে। সিজানের সঙ্গে তার পিতাও গ্রেপ্তার হন। সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি শুকুর আলীর আদি বাড়ি গাইবান্ধার বাদিয়াখালী গ্রামে। দিনমজুরের কাজ করতে এসে কাহালুর শীতলাই গ্রামের আর এক দিনমজুরের কন্যা কল্পনা আক্তারকে বিয়ে করে ঘর বাঁধেন সরকারি খাস পুকুরপাড়ে। জমিজমা কিছুই নেই। অ্যাজমা রোগী শুকুর আলী বিভিন্ন স্কুলের গেটে আচার বিক্রি করেন। তার স্ত্রী কল্পনা ও ছেলে সিজান ছোট্ট একটি দোকান পথে বসিয়ে বেচাকেনা করেন। ছেলে সিজান ও শুকুর আলী গ্রেপ্তার হওয়ার পরই সে দোকানে চুরি হয়ে যায়। নিরুপায় কল্পনা আক্তার এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। সিজান এবং তার অন্য দুই বোনের পেটের ভাতের জন্য এখানে ওখানে ধরনা দিচ্ছেন।

গতকাল সকালে শীতলাই গ্রামে গিয়ে কথা হয় সিজানের মা কল্পনা আক্তার ও সিজানের সঙ্গে। কল্পনা আকতার জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় যশোর থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ফেরে সিজান। বাড়িতে এসে তার বাবাকে দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সারা রাত ঘুমায়নি। কিছু খায়ওনি। শুধুই বাবার জন্য রাত জেগে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে। সকালে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় ভাত খেতে বললেও কিছুই খায়নি। কাঁদতে কাঁদতে আর চোখ মুছতে মুছতে পরীক্ষা দিতে চলে গেছে। সকালে সিজানের সঙ্গে কথা হয়। সিজান জানালো, কয়েক দিন খুব কষ্টে ছিলাম। একদিকে মা, বাবা ও দুই বোনকে নিয়ে চিন্তা। অন্যদিকে জেলখানায় খাবারের কষ্ট।  ছাড়া পাওয়ার পর ভেবেছিলাম বাবাও ছাড়া পেয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে বাবাকে দেখবো। কিন্তু বাবা ছাড়া পাননি। আমরা নির্দোষ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমরা পিতা-পুত্রকে মামলা থেকে মুক্তি দিন। পরে কাহালু সিদ্দিকীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখা গেল সিজান মাথা নিচু করে লিখছে। তবে তার চোখে-মুখে হতাশার চিহ্ন।

No comments

Powered by Blogger.