বিশ্বের ১৫ নম্বর ক্ষমতাধর মোদি

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব একজন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় তার অবস্থান ১৫ নম্বরে। তবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফোর্বসের সমপাদক ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা মোট ৭২ ব্যক্তিকে এ তালিকায় রেখেছেন। এতে রয়েছেন বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিভিন্ন সংস্থা বা সংগঠনের প্রধান। পুতিনের শীর্ষস্থান দখল করা সমপর্কে ফোর্বস বলেছে, পশ্চিমা বিশ্বের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও ইউক্রেন সঙ্কটের সময় নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রায় পুরোটাই হাসিল করতে সক্ষম হন। এর পাল্টা হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বের আরোপ করা অবরোধও বেশ কঠিনভাবে মোকাবিলা করেছেন তিনি। এছাড়া বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান হারাতে যাওয়াটাও বারাক ওবামার শীর্ষস্থান হারানোর অন্যতম কারণ। এর চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে- দু’দিন আগে রিপাবলিকানদের কাছে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট- উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেশ বিপাকে আছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। সব মিলিয়ে জ্বালানি সমৃদ্ধ ও পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত রাশিয়ার অপরিমেয় ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট পুতিনের দখলেই রয়েছে শীর্ষস্থানটা। ওবামা এ নিয়ে তিনবার শীর্ষস্থান হারালেন। দু’বার পুতিনের কাছে। একবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর কাছে। এবারের তালিকায় চিনফিং আছেন তৃতীয় অবস্থানে। পোপ ফ্রান্সিস আছেন চতুর্থ অবস্থানে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন দু’জন নারী। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল রয়েছেন তালিকার পঞ্চম অবস্থানে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নারী চেয়ারম্যান জ্যানেট ইয়েলেন দখল করেছেন ষষ্ঠ স্থান। বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট-এর চেয়ারম্যান বিল গেটস রয়েছেন তালিকার সপ্তম অবস্থানে। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রধান মারগিও দ্রাগি দখল করেছেন অষ্টম স্থান। গুগলের সার্জি ব্রায়ান ও ল্যারি পেইজ যৌথভাবে আছেন নবম স্থানে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন রয়েছেন তালিকার দশম স্থানে। শীর্ষ পাঁচটি অবস্থান গতবারের মতোই রয়েছে, পরিবর্তন হয়নি। তালিকায় রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছেন ১৭ জন। ইউরোপীয় অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ ১৭ নম্বরে অবস্থান করছেন।

অপরদিকে ক্ষমতায় না থেকেও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রয়েছেন ৪৪ নম্বর স্থানে। মোট ২৯ জন বিলিয়নিয়ার রয়েছেন তালিকায়। বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে অনেকে দাতব্য কাজে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। এদের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ধনী বিল গেটস এখানেও বিলিয়নিয়ারদের মধ্য শীর্ষস্থান দখল করে আছেন। এছাড়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন ওয়ারেন বাফেট, কার্লোস স্লিম, মার্ক জাকারবার্গ, মাইকেল ব্লুমবার্গ। এ তালিকায় রয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৯ জন প্রধান নির্বাহী। উদ্যোক্তা রয়েছেন মোট ১৪ জন। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক রয়েছেন ২৫ নম্বরে। ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ রয়েছেন ২২ নম্বরে। নাইজেরিয়ার ডানগোটে গ্রুপের আলিকো ডানগোটেও রয়েছেন এর মধ্যে। এ তালিকায় ১২ জন নতুন করে স্থান করে নিয়েছেন, যারা গত বছর তালিকায় ছিলেন না। এর মধ্যে দু’জন সদ্য নির্বাচিত সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান। এরা হলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল আল সিসি। এরা রয়েছেন যথাক্রমে ১৫ ও ৫১ নম্বরে। চীনের সবচেয়ে বড় ধনী আলিবাবা’র প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা প্রথমবারের মতো ঢুকেছেন এ তালিকায়। তিনি আবার একাধারে উদ্যোক্তা ও বিলিয়নিয়ারও। আইএস-এর স্বঘোষিত খলিফা আবু বকর আল বাগদাদিও রয়েছেন এ তালিকাতে। এছাড়া ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ও রাশিয়ান গ্যাস-জায়ান্ট গাজপ্রমের প্রধান অ্যালেক্সে মিলারও প্রথমবারের মতো স্থান করে নিয়েছেন। তালিকায় নারী রয়েছেন ৯ জন। বিশ্বে নারীদের মোট জনসংখ্যা ৫০ শতাংশ হলেও, বিশ্বের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ নারী। গত বছরেও ছিল একই অবস্থা। তবে ২০০৯ সালে যেখানে মাত্র তিনজন নারী ছিলেন এ তালিকায়, সেখানে এখনকার অবস্থান তুলনামূলক ভালই বলতে হবে। এ ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ ও পার্ক জিউন হ্যে। রয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টিনে লগার্ড ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মার্গারেট চান। তালিকায় স্থান করে নেয়া সর্বোচ্চ ২৬ জন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে রয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ জন। এর মধ্যে ছয়জনই চীনের। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি- মুন রয়েছেন ৪০ নম্বরে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আছেন ৬৩ নম্বরে। ব্যাংক অব জাপানের গভর্নর হারুহিকো কুরোদা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খিদিয়াংও রয়েছেন এদের মধ্যে। জাপানের বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটার প্রধান আকিও টয়োটা রয়েছেন তালিকার ৩৪ নম্বরে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেওয়াই লি ও লি কুন হি দখল করেছে যৌথভাবে ৩৫তম স্থান। মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার অন্যদের মধ্যে সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ রয়েছেন ১১ নম্বর স্থানে। ইরানের আলী হোসেন খামিনি রয়েছেন ১৯ নম্বরে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু রয়েছেন ২৬ নম্বরে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের খলিফা বিন যায়েদ আল নাহিয়ান রয়েছেন ৩৭ নম্বরে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উন রয়েছেন ৪৯ নম্বরে। সৌদি তেলমন্ত্রী আলী আল নাইমি রয়েছেন ৫০ নম্বরে। মাইক্রোসফট-এর ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধান নির্বাহী সত্য নন্দেলাও আছেন এদের মধ্যে। ভারতীয়দের মধ্যে নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও বিলিয়নিয়ার মুকেশ আম্বানি ও লক্ষ্মী মিত্তাল স্থান করে নিয়েছেন এ তালিকায়।

No comments

Powered by Blogger.