গাছেরও খাচ্ছেন তলারও কুড়াচ্ছেন

একই সঙ্গে দুটি করে সরকারি বাসা ব্যবহার করছেন ৯ আমলা। কয়েক বছর আগে তাদের বদলি করা হলে তারা নতুন বাসা বরাদ্দ পেলেও একইসঙ্গে দখলে রেখেছেন আগের বাসাও। বিদ্যমান বেতন স্কেল অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা দুই বাসার ভাড়া কিভাবে পরিশোধ করছেন- সেই অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক। এ প্রক্রিয়ায় দুটি করে বাসা দখলে রাখা কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়ে গত ২৩ আগস্ট পূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় দুদক। সম্প্রতি এ চিঠির জবাব পেয়েছে দুদকে। প্রথম পর্যায়ে ই এবং এফ শ্রেণীর বাসা দখলে রাখা ৯ কর্মকর্তার তথ্য পাঠায় মন্ত্রণালয়। এতে দেখা যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আবদুল হান্নান শেখকে ২০১২ সালের ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম পোর্টের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়ার পর চট্টগ্রামে তিনি একটি বাসা বরাদ্দ পান। অথচ রাজধানীর ১, ইস্কাটন রোডের বি-১০/ই- নম্বরের বাসাটিতেও তিনি বসবাস করছেন। ধানমণ্ডি কামরুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলকিস বেগমকে ২০০৯ সালের ৯ জুলাই বদলি করা হয় টাঙ্গাইল বাসাইল উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। নিয়মানুযায়ী তিনি সেখানে একটি সরকারি বাসা পেয়েছেন। কিন্তু তাই বলে দখল ছাড়েননি রাজধানীর মতিঝিলস্থ বি-৮/ই-২ নম্বর সরকারি বাসাটিও। বাসা খালি করে দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি আবাসন পরিদপ্তর বারবার তাগিদ দিলেও তিনি উল্টো রিট (নং-৬২৮৭/২০১০) করে আগের বাসার দখলস্বত্ব বজায় রেখেছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন-বিসিকের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীকে ২০১১ সালের ১ জুন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে সরকারি বাসা পেলেও বসবাস করছেন মতিঝিলস্থ বি-৯/ই-৭ নম্বর বাসাটিতে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোঃ সাইফুল ইসলাম বাদলকে বদলি করা হয় মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক হিসেবে। তবে তিনি রাজধানীর গ্রিন রোডস্থ গোধূলী-৫ বাসাটির দখল ছাড়েননি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব টি.কে.এম মোশফেকুর রহমান বিদেশে পোস্টিং হলেও দখলে রেখেছেন সার্কিট হাউজস্থ এফ-এ ১ (পূবালী) বাসাটি। একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সরোয়ার আলমকে পদায়ন করা হয়েছে বিদেশে। কিন্তু তিনিও দখলে রেখেছেন রাজধানীর ৮/৬ বেইলি স্কোয়ারের বাসাটি। উপসচিব এম.এন. সেলিমকে বদলি করা হয়েছে ভূমি সংস্কার বোর্ড, বরিশালে। সেখানে বাসা পেলেও তিনি এখনও বসবাস করছেন ৭৬, নিউ সার্কিট হাউসের বাসায়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন আক্তারকে বদলি করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। অথচ দখল ছাড়েননি স্যুট নং-১৪-৫ ইস্কাটন গার্ডেন রোডের বাসার। সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ আলমগীর হোসেনকে বদলি করা হয়েছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। সেখানে সরকারি বাসা পেলেও দখলে রেখেছেন ঢাকার সার্কিট হাউসস্থ ৪৮/২-আই নম্বরের বাসা।
দুটি করে বাসা দখলে রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের অস্থায়ী বাসা বরাদ্দ শাখা এ বিষয়ে কাজ করছে। শাখার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় দুদককে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছে।
সূত্র মতে, একসঙ্গে দুটি সরকারি বাসা দখলে রেখে এসব কর্মকর্তা সরকারের কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি সাধন করছেন দুদক তা খতিয়ে দেখছে। যদি তারা দখলে থাকা দুটি বাসারই ভাড়া পরিশোধ করে থাকেন তাহলে অতিরিক্ত পরিশোধকৃত অর্থের উৎস কি তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দুদকের উপপরিচালক হামিদুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের একটি টিম বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। অপর তিন সদস্য হলেন- উপপরিচালক মাহবুব আলম, উপসহকারী পরিচালক ওমর ফারুক ও তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া।

No comments

Powered by Blogger.