অভূতপূর্ব মানবিকতা

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় বিদেশ পাড়ি দিতে যাওয়া অভিবাসীদের জীবন বাঁচাতে অনন্য এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এক দম্পতি। লাখ লাখ ইউরো খরচ করে তারা বাঁচিয়েছেন তিন হাজার মানুষের জীবন। বিবিসির ম্যাগাজিন ‘মনিটর’-এ এ নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দম্পতির ৬০ দিনের মিশন কিভাবে শেষ হয়েছিল, আর এর মধ্য দিয়ে তারা কি অর্জন করেছেন, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তাদের সঙ্গে কথা বলেন বিবিসি’র অ্যালিসন গি। আলাপচারিতায় উঠে এসেছে অসাধারণ এক মানবতার গল্প। বিপদগামী অভিবাসীদের সহায়তার জন্য মাইগ্রান্ট অফশোর এইড স্টেশন (মোয়াস) স্থাপন করেছেন ক্রিস্টোফার কাত্রাম্বোনে। এতে তাকে সহায়তা করেছেন তার স্ত্রী রেজিনা এবং কন্যা মারিয়া লুইসা। ক্রিস্টোফার বলেন, আমরা কমপক্ষে ৩ হাজার নারী-পুরুষ, শিশুকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পেরেছি। আর তা না হলে হয়তো তাদের জীবন বিপন্ন হতো। তিনি আরও বলেন, একেকটি নৌকায় যাত্রীর সংখ্যাতেই তিনি হতবিহ্বল। অনেককে নৌকার নিচের ডেকে ঠেলে পাঠানো হয় যেখানে ডুবে যাওয়া এবং শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সবথেকে বেশি ঝুঁকি থাকে। আপনি যদি কাছ থেকে না দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন তা এ নৌকাযাত্রা কতটা ভয়াবহ। ফিলিস্তিনি এক বয়স্ক নারীর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, নৌকাযাত্রার খরচ যোগাতে সে তার যাবতীয় সহায়-সম্বল মাত্র ১৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। সিরিয়ার অপর এক বয়স্ক দম্পতিকে তাদের জীবনের সন্ধিক্ষণে প্রিয় শহর আলেপ্পো ছাড়তে হয়। ক্রিস্টোফার বলেন, কেমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে তারা নিজেদের পরিবারকে এমন বিপজ্জনক যাত্রায় ঠেলে দিয়েছে তা অনুধাবন করাটাও কঠিন। এক অর্থে তারা সৌভাগ্যবানদের দলে। এ যাত্রার খরচ যোগানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের ছিল। এদের অনেকে পেশাদার জীবনে ছিলেন- শিক্ষক, প্রকৌশলি এবং আইনজীবী। মোয়াস কিছুসংখ্যক অভিবাসীকে ইতালির নৌবাহিনী এবং কার্গো জাহাজে হস্তান্তর করতে সহায়তা করেছে। বাকিদের সংস্থাটির নিজস্ব জাহাজ ফিনিক্সে স্থান দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইতালি। ক্রিস্টোফারের সহধর্মিণী রেজিনা জানালেন তার সবথেকে বেশি মনে থাকবে শিশুদের কথা। তিনি বলেন, আমরা কিছু খেলনা পেয়েছিলাম অনুদানে। সেগুলো বাচ্চাদের হাতে তুলে দেয়ার পর তাদের চেহারায় যে হাসি ফুটেছিল তা অমূল্য। রেজিনা আরও বলেন, বাচ্চারা কিন্তু জানে না এ যাত্রায় কি ঘটছে। যখন আপনার চারপাশে এতগুলো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চেহারায় দুর্দশার স্পষ্ট ছাপ তখন তিন বছরের একটি বাচ্চার হেসেখেলে বেড়ানোর দৃশ্য দেখতে অনেক ভাল লাগে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দেয়া অভিবাসীদের সংখ্যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। অক্টোবরের শুরুতে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার। জুলাই ও সেপ্টেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে কমপক্ষে ২২০০ মানুষ মারা গেছেন। বিপদগামী এসব অভিবাসীর পাশে দাঁড়ানোর মহৎ মিশনে মাল্টার কাত্রাম্বোনে দম্পতি নিজেদের পকেট থেকে খরচ করেছেন প্রায় ১৬ লাখ ইউরো। আগামী বছর আবারও সাগরে তাদের জাহাজ ভাসানোর জন্য এ দম্পতি এখন পর্যাপ্ত তহবিল গঠনের চেষ্টা করছেন।

No comments

Powered by Blogger.