বিমান কি এভাবেই চলবে?

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্লোগান হচ্ছে আকাশে শান্তির নীড়। বাস্তবে এটি যে আকাশে কী ভয়ংকর অশান্তির নীড় হিসেবে উড়ছে তা বোঝা যায় গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদন থেকে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের উচ্চমর্যাদার প্রতীক তার বিমান সংস্থা। সেই প্রতিষ্ঠানটিকে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও অমর্যাদাকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে কতিপয় অর্থলোভী কেবিন ক্রু এবং কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী, তা শুনে আঁতকে উঠেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এমডি স্বয়ং। চোরাচালানি মাফিয়া চক্র এ সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে উৎকোচ দিয়ে প্রায় সম্পূর্ণরূপে কিনে ফেলেছে। তারা রাষ্ট্রের মর্যাদার প্রতীককে ব্যবহার করছে স্বর্ণ, ওষুধ ও বিদেশী মুদ্রা পাচারের অবাধ ও নিরাপদ বাহন হিসেবে। বস্তুত বিমান হয়ে উঠেছে তাদের অপরাধ সাম্রাজ্যের অংশ।
জানা গেছে, এসব চোরাকারবারির কাছে সবচেয়ে মূল্যবান রুট হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, জেদ্দা, দাম্মাম ও কুয়েত। এসব রুটে চলাচলকারী প্রতিটি ফ্লাইট তারা ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকায় কিনে নিচ্ছে। এই টাকা তারা বিমানের কতিপয় কেবিন ক্রু এবং অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিচ্ছে, যারা তাদের কোটি কোটি টাকার চোরাচালানকৃত পণ্য সহিসালামতে নিরাপদে ঠিকানায় পৌঁছে দিচ্ছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কারা, কীভাবে এই ভয়ানক অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং ব্যবস্থাপনার কোন কোন ফাঁকফোকর গলে চোরাচালানের মালামাল নিরাপদে পার হতে পারছে। বিমানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিমান কেনাবেচার বিষয়টি বায়বীয়, দেখা যায় না। মূলত বিক্রি হয় ক্রু। চোরাচালানিদের জন্য লোভনীয় রুটগুলোয় ডিউটি দেয়া হয় সেসব ক্রুকে। শুধু কেবিন ক্রু-ই নয়, বেশ কজন ককপিট ক্রুও এই শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য।
যারা সংবাদপত্রের নিয়মিত পাঠক তারা জানেন, বিমানবন্দরে প্রায় প্রতিদিনই চোরাচালানকৃত সোনা, মাদক, বিদেশী মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। সীমাহীন দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, চুরি, লুটপাটের কারণে বাংলাদেশ বিমান বছরের পর বছর একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে এ সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশের মর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে, দেশে-বিদেশে গাড়ি-বাড়ি করছে, এমনকি নাগরিকত্বও নিচ্ছে অন্য দেশের। একজন শীর্ষ কাস্টমস কর্মকর্তা বলেছেন, শর্ষের ভেতর ভূত থাকায় চোরাচালানিদের ধরতে তাদের বেশি কষ্ট হচ্ছে। বিমানের অসাধু পাইলট থেকে ঝাড়–দার পর্যন্ত সব বিভাগের লোকজনের মধ্যে এই সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছে।
বিমানের অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে সরকার অবহিত। অর্থমন্ত্রী বিমানের দুর্নীতির কথা স্বীকার করে একবার বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি তার অদক্ষতা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হলে এটি বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে বিমানের দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে নেয়া হয়নি কোনো কঠোর পদক্ষেপ। ফলে প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একের পর এক অনিয়ম করে আসছে। আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। রাষ্ট্রের জনগণের অর্থে এমন মাফিয়া সাম্রাজ্য লালনের উদাহরণ পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিমান থেকে মাফিয়া চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে প্রতিষ্ঠানটিকে কলুষমুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.