রিপার ঘাতক ৩ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

রাজধানীর সোবহানবাগে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে গৃহবধূ আয়েশা আক্তার রিপার নৃশংস মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। গাড়ি থেকে রিকশা আরোহী রিপার ব্যাগ ধরে টেনে-হিঁচড়ে প্রায় ৫০০ গজ দূরে নিয়ে গেলেও রিপার আর্তচিৎকার তাদের মনে কোন মায়া জন্মাতে পারেনি। ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই রিপার মৃত্যু ঘটে। ঘটনার ১৪ দিন পর গ্রেপ্তার করা হলো ছিনতাইকারীদের। এ ঘটনায়  গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে আবুল কালাম, হেমায়েত হোসেন ওরফে হিমু ও আলমগীর হোসেন ওরফে রতন। সোমবার রাতে মিরপুরের ছয় নম্বর সেকশন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, চারটি ভ্যানিটি ব্যাগ, একটি ল্যাপটপ ব্যাগ ও দু’টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে জানান, সেদিন মাইক্রোবাসটি চালাচ্ছিল আবুল কালাম। হিমু গাড়ি  থেকে রিপার ব্যাগ ধরে টান দেয়। ব্যাগের হাতল রিপার হতে আটকে থাকায় টান লেগে তিনি রিকশা থেকে পড়ে যান। ওই অবস্থায় মাইক্রোবাসটি তাকে রাস্তায় টেনে- হিঁচড়ে প্রায় ৫০০ গজ দূরে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীরা ব্যাগটি পেয়ে চলে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পথচারীরা রিপাকে উদ্ধার করে। ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই রিপার মৃত্যু ঘটে। তার ব্যাগে ছিনতাইকারীরা প্রায় ৫০০০ টাকা পেয়েছিল বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
হিমু ও কালামকে গাড়িটি ভাড়া দিয়েছিল রতন। হিমু ও কালাম আগেও ছিনতাইয়ের অভিযোগে  গ্রেপ্তার হয়েছিল। তারা জামিন  পেয়ে বের হয়ে আবার এই ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা  নেয়া হচ্ছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
ধানমন্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত গাড়িটি ওয়াহিদ বক্স জামিল নামক মিরপুরের এক ব্যক্তির। এই গাড়িটি প্রায়ই নিজে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যেতো আলমগীর হোসেন ওরফে রতন। জামিলের একাধিক গাড়ি থাকায় পাড়ার ছেলে হিসেবে পুরাতন এই গাড়িটি চাইলে রতনকে প্রায়ই ব্যবহার করতে দিতেন তিনি। কিন্তু রতন তা ছিনতাই কাজে প্রতিঘণ্টায় ২০০০ টাকায় ভাড়া দিতো। তবে ওই দিন ১৫০০ টাকায় হিমু ও কালামকে ভাড়া দেয় সে।
ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, প্রায় আড়াই বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করে আসছে হিমু ও কালাম। তারা দু’টি পদ্ধতিতে ছিনতাই করে থাকে। কখনও চলন্ত গাড়ি থেকে রিকশা আরোহী বা পথচারীদের ব্যাগ টেনে নিয়ে যায়। আবার কখনও তারা পাঁচ-ছয় জন মিলে অস্ত্র উঁচিয়ে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নেয়। রাজধানীতে এ রকম প্রায় ১৫টি চক্র আছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে কালাম ও হিমু।
গ্রেপ্তারকৃত আবুল কালামের বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদী থানার চর লক্ষ্মীপুর গ্রামে। তার পিতার নাম আবদুল খালেক। হেমায়েত হোসেন ওরফে হিমুর বাড়ি বরগুনা জেলা সদরের ছোট গোছন্না গ্রামে। তার পিতার নাম নিজাম উদ্দিন খান। সে রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৫ নম্বর সড়কের ৩৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা। আলমগীর  হোসেন ওরফে রতন রাজধানীর মিরপুরের ছয় নম্বর সেকশনের এ ব্লকের দুই নম্বর লাইনের ৪৬ নম্বর বাসার হাবিবুর রহমানের পুত্র।

No comments

Powered by Blogger.