সিআইডিকে ইনকোয়ারি থেকে অব্যাহতি

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার ইনকোয়ারি থেকেও বাদ পড়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই সংস্থাটিকে ইনকয়ারি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
হাইকোর্টের সুয়োমটো (স্বতঃপ্রণোদিত) আদেশে চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করে ডিটেক্টটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি) ও সিআইডি। তদন্তের শুরু থেকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাইকোর্টে দাখিল করে আসছিল সিআইডি, যা দেখে হাইকোর্ট এই সংস্থার প্রশংসাও করেছিলেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার তদন্ত থেকে সিআইডিকে বাদ দেয়ার দাবি ওঠে। যুক্তি দেখানো হয়, ফৌজদারি মামলার তদন্ত দুটি সংস্থার মাধ্যমে করা আইনগতভাবে সঠিক নয় এবং এতে বিচার ভণ্ডুল হয়ে যাবে।এ অবস্থায় গত ১০ জুলাই হাইকোর্ট সিআইডিকে তদন্ত থেকে বাদ দিতে রাষ্ট্রপক্ষের লিখিত আবেদন খারিজ করে আগের আদেশ কিছুটা সংশোধন করে দেন। নতুন আদেশে সিআইডিকে ইনভেস্টিগেশন (তদন্তের) এর পরিবর্তে ইনকোয়ারি (অনুসন্ধান) করতে বলা হয়। এই ঘটনায় অনুসন্ধান প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করার কথা ছিল সংস্থাটির। কিন্তু সিআইডির ইনকোয়ারি নিয়েও আপত্তি তোলে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ঘটনা থেকে পুরোপুরি দূরে রাখতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন জানায়। দুদিন শুনানি নিয়ে সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের ওই আবেদন মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ।আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম নাজমুল হক তার সঙ্গে ছিলেন। জানতে চাওয়া হলে নাজমুল হক বলেন, এর আগে সিআইডিকে বাদ দিতে রাষ্ট্র পক্ষের করা আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করেছিলেন। আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাই। আপিল বিভাগ আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে সিআইডিকে সাত খুনের ইনকোয়ারি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির একটি প্রতিবেদন সোমবার এবং র‌্যাবের একটি প্রতিবেদন মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশের মহাপরিদর্শকের অপর একটি প্রতিবেদন এখনও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পৌঁছেনি। আগামী বৃহস্পতিবার এসব অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করার কথা রয়েছে।জানা গেছে, সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরির জন্য আরও চার সপ্তাহ প্রয়োজন। এছাড়া র‌্যাবও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরির জন্য এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে।গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহরণের শিকার হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে ছিল। পরে এক স্বতঃপ্রণোদিত আদেশে ৫ মে হাইকোর্টের উপরোক্ত বেঞ্চ সিআইডিকেও এই তদন্তের দায়িত্ব দেয়। বলা হয়, মূল তদন্ত ডিবিই করবে, সিআইডি করবে ছায়া তদন্ত। এছাড়া র‌্যাবের কোনো সদস্য জড়িত ছিল কিনা তার বিভাগীয় তদন্তের জন্য র‌্যাবকে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ঘটনার সার্বিক তদন্ত করতে বলা হয়।সেই থেকে তদন্ত করে আসছিল সিআইডি। এ অবস্থায় ৪ জুন শুনানিকালে এই সংস্থাটিকে তদন্ত থেকে বাদ দেয়ার জন্য আদালতের কাছে বারবার মৌখিক আবেদন জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

No comments

Powered by Blogger.