বিশ্বমিডিয়ায় বাংলাদেশের ‘হিজড়া প্রাইড’

বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত হিজড়াদের কথা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের আনাচে-কানাচে। তাদের নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া সহ সর্বত্র প্রকাশিত হয়েছে ফিচার প্রতিবেদন। বিশেষ করে সোমবার ঢাকায় তাদের ‘হিজড়া প্রাইড’ উদযাপনের পর সে খবর বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃটেনের ডেইলি মেইল বেশকিছু ছবি সহ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে হিজড়া সম্প্রদায়ের নানা কথা। তাতে বলা হয়েছে, গত বছর তাদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর তারা প্রথমবারের মতো ঢাকায় আনন্দ র‌্যালি করেছে। এ সময় তারা বাহারি পোশাকে নিজেদের তুলে ধরে। কেউ রঙিন শাড়ি পরে, ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে, কপালে টিপ পরে মনোহারি সাজ দেন। তারা নেচে-গেয়ে মাতিয়ে তোলেন ঢাকার রাজপথ। এ সময় তাদেরকে দেখতে যানজট লেগে যায়। এ সময় তারা বাংলাদেশের একটি বিশাল পতাকা মেলে ধরে রাস্তায়। তাদের হাতে ছিল ব্যানার। তাতে লেখা- কলঙ্ক, অবমাননা আর আতঙ্কের অবসান হয়েছে। এই র‌্যালিতে অংশ নিয়েছেন সোনালি (২৫) নামের এক হিজড়া। তিনি বলেন, আমার জীবনে এমন সুযোগ আসবে এমনটা আমি কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করি নি। সব জায়গায়ই আমাদেরকে কলঙ্কের দৃষ্টিতে দেখা হয়। আমরা অবমাননার শিকার। আমাদেরকে দেখলে মানুষ শুধু হাসে। কারণ, আমরা পুরুষ বা নারী কোনটির মতোই দেখতে না। আমাদের শারীরিক গঠন এমনই। এখন দিন বদলে গেছে। আমরা নিজেদের এখন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে মনে করছি। দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক পুরনো দিন থেকে রয়েছে হিজড়া কাহিনী। বিশেষ করে তাদের বসবাস বেশির ভাগই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে। যেসব যুবক ছেলেকে তার পরিবার ত্যাগ করে অথবা যারা পরিবার থেকে পালিয়ে এসেছে এমন ছেলেদের তারা ‘দত্তক’ হিসেবে নিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে। তবে বৃটিশ রাজের সময় তারা প্রচ- অবমাননার শিকার হয়। তখন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে জনস্বার্থের বিরোধী বলে আখ্যায়িত করে তাদেরকে নির্মূল করে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়ে একটি আইন পাস করেন। এর ফলে হিজড়ারা নিজেদের আলাদা একটি লিঙ্গের অধিকারী হিসেবে পরিচয় দিতে পারছেন। তারা এখন পাসপোর্ট করতে পারবেন। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার হিজড়া আছে। কিন্তু মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থাগুলো মনে করে এ সংখ্যা ৫ লাখের মতো হবে। সোমবার র‌্যালির আগের দিন রোববার এ সম্প্রদায় তাদের অধিকারবিষয়ক একটি সেমিনার আয়োজন করে। সেখানে নাচ ও গানে তাদের মেধার প্রকাশ ঘটায়। এ মাসের শেষের দিকে হিজড়া বিউটি প্রতিযোগিতার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর লিও কেনি বলেন, হিজড়াদের অধিকার আদায়ে আরো অনেক কিছু করা উচিত। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এ বছরই প্রথম সমকামী বিষয়ে প্রথম ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনায় তেমন প্রতিবাদ দেখা যায় নি।

No comments

Powered by Blogger.