দ্রুত মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আহ্বান

বেইজিংয়ের গ্রেট হলে গতকাল বৈঠকের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন
জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। একপর্যায়ে সেখানে আসেন
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ সময় তাঁর উদ্দেশ্যে
হাত বাড়িয়ে দেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী। ছবি: রয়টার্স
রস্তাবিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে ‘যত শিগগির সম্ভব’ একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের নেতারা। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে গতকাল সোমবার শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা (অ্যাপেক) সংস্থার সম্মেলনের আগে এক বিবৃতিতে তাঁরা এই আহ্বান জানান। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। ওবামার পাশাপাশি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মেক্সিকোসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১১টি দেশের নেতারা আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারত্বমূলক (টিপিপি) মুক্তবাণিজ্য ধারণার ওপর একটি চূড়ান্ত আলোচনা শুরু করতে এবং এ বিষয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ অর্জন করতে আলোচকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন। নেতাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে গতকাল বলা হয়েছে, ‘সময় ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে আমরা এই চুক্তির বিষয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে আমাদের মন্ত্রী ও আলোচকদের নির্দেশনা দিয়েছি...যাতে করে যত শিগগির সম্ভব টিপিপি চুক্তির প্রকৃত ও বাস্তবিক সুবিধাগুলো বের করে আনা যায়।’
টিপিপি হচ্ছে ওয়াশিংটন-সমর্থিত মুক্তবাণিজ্যবিষয়ক একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর কড়াকড়ি শিথিলের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ এর সদস্য দেশের সংখ্যা ১২। দেশগুলো বেইজিংয়ে অ্যাপেক সম্মেলনের ফাঁকে গতকাল বৈঠক করে। টিপিপি বাস্তবায়নে ওয়াশিংটন বছরের পর বছর ধরে চাপ দিয়ে এলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনকে এর বাইরে রেখেছে। কিন্তু জাপানসহ কিছু সদস্য দেশ নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিরোধিতা করায় বিভিন্ন সময় এ নিয়ে অগ্রগতি আটকে গেছে। বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবামা বলেছেন, তিনি ‘ঐতিহাসিক’ আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছেন। ২১ সদস্যের অ্যাপেক সম্মেলন থেকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএএইপি) ধারণার ব্যাপারে একটি জোরালো প্রতিশ্রুতি চায় চীন। দেশটির মতে, পুরো অঞ্চলের জন্য এই দীর্ঘমেয়াদি ধারণাটি টিপিপি ও মুক্তবাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পদক্ষেপগুলোর ভিত্তিতেই গড়ে উঠবে। আর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ে মার্কিন অর্থনৈতিক নীতির প্রশ্নে টিপিপি হচ্ছে ‘প্রধান ফোকাস’। চীনের গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, টিপিপি বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাবের লাগাম টেনে ধরার একটা প্রচেষ্টা। এ ছাড়া রাশিয়ার বক্তব্যও একই ধরনের। অ্যাপেক সম্মেলনে অংশ নেওয়া রুশ প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যাতে লাভবান হয়, সেভাবেই সাজানো হয়েছে টিপিপি।
তবে ওয়াশিংটন এ ধরনের অভিযোগগুলো বরাবরই নাকচ করে আসছে। জিনপিং-আবে বৈঠক: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি জাপানের মধ্যে জলসীমা বিরোধ নিয়ে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে টানাপোড়েন চলে আসছে। দেশ দুটির নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জিনপিং ও আবে এই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক করলেন। বেইজিংয়ে অ্যাপেক সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে এশিয়ার এই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কন্নোয়নের ক্ষেত্রে একটা যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় রয়েছেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী আবে। অথচ নিয়মানুযায়ী অতিথির জন্যই চীনা প্রেসিডেন্টের অপেক্ষায় থাকার কথা ছিল। দুই নেতা যখন এক জায়গায় হয়ে হাত মেলান, তখন জিনপিংয়ের মুখে কোনো হাসি ছিল না। প্রথম সাক্ষাতের সময় আবের সঙ্গে কথাও বলেননি জিনপিং। পূর্ব চীন সাগরে অবস্থিত কিছু দ্বীপ নিয়ে বিরোধ, আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার ও যুদ্ধের সময়ে চীনকে জাপান দখল করে নেওয়াসহ কয়েকটি বিষয়ে অনেক আগে থেকেই চীন-জাপান সম্পর্কে একটা দূরত্ব রয়েছে। তবে গতকালের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে সংলাপ শুরুর দরজা খুলে দিয়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

No comments

Powered by Blogger.