রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ- সমাবেশ থেকে শিক্ষকের খুনিদের শাস্তি দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল ইসলামের (৫১) খুনিদের শাস্তি দাবি করেছে শিক্ষক সমিতি। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠিত এক শোকর‌্যালিতে ওই দাবি জানানো হয়।
শিক্ষক শফিউল ইসলামকে হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল শনিবার রাতে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে।
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে থেকে একটি শোকর‌্যালি বের করে শিক্ষক সমিতি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক ঘুরে আবার সিনেট ভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সারা দেশের মানুষের মধ্যে একধরনের ধারণা তৈরি হয়েছে যে এখানে সব সময় খুন-খারাবি হয়। অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ হয় যে এখানে আমরা কেউ নিরাপদ নই। বক্তারা, সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে খুনিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানান।

>>রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিউল ইসলামকে হত্যার প্রতিবাদে আজ রোববার ক্যাম্পাসে শোক শোভাযাত্রা বের করে শিক্ষক সমিতি। ছবিটি বেলা সোয়া ১১টার দিকে তোলা। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী
শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান মজুমদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার পাণ্ডের সঞ্চালনায় শোকর‌্যালিতে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ছাদেকুল আরেফিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ওয়ারদাতুল আকমাম, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রশাসক সফিকুন্নবী সামাদী, অধ্যাপক আবুল কাশেম, অধ্যাপক জাহিদুল হাসান, অধ্যাপক শামসুল আলম সরকার, অধ্যাপক আফসার উজ জামান খান প্রমুখ।
প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিক্ষক শফিউল ইসলামকে হত্যার প্রতিবাদে বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার সব কার্যক্রম চলছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী চৌদ্দপায় এলাকায় নিজের বাসার কাছে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে হত্যা করে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর বিকেলে শফিউল ইসলাম মারা যান। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গতকাল রাতে দুজনকে আটক করা হয়েছে। মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন আটক ব্যক্তিদের নাম জানাননি। কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে পুলিশ এখন পর্যন্ত কিছু বলতে পারেনি।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার পাণ্ডে জানান, শিক্ষক সমিতি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করলেও সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ভর্তি কার্যক্রম নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী অব্যাহত রয়েছে।
অধ্যাপক শফিউল ইসলামের প্রথম নামাজে জানাজা গতকাল রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাতেই তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হিয়াতপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই আজ দাফন সম্পন্ন করা হবে।
আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ ২ নামে একটি সংগঠন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের একটি পেজে তাঁদের ‘মুজাহিদিনরা’ শিক্ষক শফিউল ইসলামকে হত্যা করেছে বলে দাবি করে। ক্লাসে বোরখা পরা নিষিদ্ধ করার অপরাধে শফিউল ইসলামকে হত্যা করা হয় বলে তাঁদের দাবি। তবে তাঁদের এই দাবির বিষয়ে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.