মৃতদেহ গণনার কেউ ছিল না

দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবায় বন্দুকের আওয়াজে গত বছর ডিসেম্বর মাসে এক সন্ধ্যার নীরবতা ভেঙে যায়। প্রাথমিক খবরে প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক সৈন্যের মৃত্যুর কথা বলা হয়। প্রেসিডেন্ট সালাভা কিরের ক্ষমতাচ্যুত ডেপুটি রিক ম্যাচারের সমর্থকদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের অনুগত সেনাদের মধ্যে তুমুল লড়াই চলতে থাকে। পরের দিনগুলোতে একটানা কয়েকদিন ধরে গোলাগুলি ও প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে শহরটি কেঁপে ওঠে। সংঘর্ষের প্রথম দুদিনেই সাধারণ মানুষসহ কমপক্ষে ৫০০ লোক প্রাণ হারায়। সংঘর্ষ চলাকালে শহরের আতংকিত সাধারণ মানুষ ও স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা কারফিউয়ের মধ্যে নিজেদের বাড়িতেই অবস্থান করে। দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট ও তার ডেপুটির মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বটি জাতিগত সহিংসতায় রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানায়, কিরের সমর্থক জাতিগত দিনকা সৈন্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ম্যাচারের সমর্থক জাতিগত নুয়েরদের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে তাদের হত্যা করে।
রাতের বেলা অতি সতর্কতার সঙ্গে মৃতদেহগুলোকে নগরীর বাইরে ট্রাকে নিয়ে গিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয় বা গর্ত করে মাটিচাপা দেয়া হয়। ওই এলাকায় মৃতদেহ গণনার মতো কেউ ছিল না। খবর এএফপির এক পশ্চিমা সাহায্য কর্মী বলেন, আমাদের হিসাবে শুধু সংঘর্ষ শুরুর প্রথম সপ্তাহেই ৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, নিহতের এই সংখ্যা ৫০ হাজার না প্রায় এক লাখ তা নিশ্চিত হতে আরও কিছু করা উচিত। এরপর অন্যান্য শহরেও একই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটতে থাকে। কোনো কোনো স্থানে লাশ গণনার লোক ছিল। কোথাও তা-ও ছিল না। সংঘর্ষ শুরু পর ১১ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। জুবায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশের একটি বড় অংশজুড়ে প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডের জন্ম দিয়েছে।উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার অভিযোগ উঠেছে। উভয়পক্ষই হত্যাযজ্ঞ, গণধর্ষণ ও সংঘর্ষে শিশু সৈন্য ব্যবহার করেছে বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিখোঁজদের কোনো পক্ষ এমনকি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা সন্ধান পায়নি। তাই তারা মারা গেছে বলে ধরা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) জানায়, এই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে ইতিমধ্যেই অন্তত ৫০ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.