ব্র্যাডম্যানের পরেই মুমিনুল

শীতের বার্তাবাহক অগ্রহায়ণ দুয়ারে এসে দাঁড়াল। শুরু হল ধান কাটার উৎসব নবান্ন। চট্টগ্রামে আজ কি আরেক উৎসব? ৩-০-র স্বপ্নপূরণ? সেই মঞ্চ সাজিয়ে রাখলেন মুমিনুল। যার ডাক নাম সৌরভ। তার শতকের সুরভিতে মৌ মৌ করছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। যেটা কোনোদিন হয়নি সেটা আজ হয়ে যেতে পারে। জিম্বাবুয়েকে ৩-০-তে ধোলাই। সেটা ধবলধোলাই হোক কিংবা কৃষ্ণধোলাই- যে নামেই ডাকুন, টেস্ট ক্রিকেটে এই নজির প্রথম গড়বে বাংলাদেশ। সেজন্য মুশফিকুর রহিমদের আজ শেষ টেস্টের শেষদিন একটা ‘ছোট্ট’ কাজ করতে হবে। জিম্বাবুয়ের নয় উইকেট নিতে হবে। কাজটা মোটেও কঠিন নয়। তিন সেশনে তিন স্পিনার সাকিব-জুবায়ের-তাইজুলকে টেলররা ঠিকঠাকমতো সামলাবেন সেই সম্ভাবনা কম। জিম্বাবুয়ের টার্গেট ৪৪৯। চতুর্থদিনের খেলা শেষে তাদের সংগ্রহ এক উইকেটে ৭১ রান। সিকান্দার রাজা ৪৩ ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ২৬ রানে অপরাজিত। তাদের দরকার আরও ৩৭৮ রান। হাতে নয় উইকেট। কিন্তু শেষদিনে বাইশ গজে টিকে থাকার সম্ভাবনা চিগুম্বুরাদের জন্য একেবারে ‘চিকন’। রুবেল হোসেন দ্বিতীয় ওভারেই চারিকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে সংকেত দিয়ে রাখলেন। আজ বাংলাদেশের ঘূর্ণি জাদুতে অতিথিরা কিভাবে কাবু হয় সেটাই দেখার।
ঋতু বদলের মতো এখন টেস্টে বাংলাদেশের পারফরমারও বদল হয়। আগেরদিন জুবায়ের জাদু দেখিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট নিয়ে। শনিবার সুরভি ছড়াল মুমিনুলের ব্যাটিং। তার অপরাজিত ১৩১ মুশফিকুরকে উদ্বুদ্ধ করে পাঁচ উইকেটে ৩১৯ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করতে। নিজের ১২তম টেস্ট ম্যাচে চতুর্থ সেঞ্চুরি পেলেন বাঁ-হাতি মুমিনুল। একটি অনন্য কীর্তি গড়ে ফেলেছেন তিনি। ১২ টেস্টের ২৩ ইনিংসে তার গড় এখন ৬৩.০৫। যা ব্র্যাডম্যানের পরে দ্বিতীয়। ২০টি বেশি ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্র্যাডম্যানের গড় ৯৯.৯৪। মুমিনুলের কীর্তি গড়ার দিনে তামিম ইকবাল পেরোলেন ফিফটি (৬৫)। তার ১৭তম হাফ সেঞ্চুরি। মুশফিকুর রহিম চার রানের জন্য মিস করলেন অর্ধশতরান। আর মুমিনুলের দিনে সাকিব তিন ম্যাচ সিরিজে ১৮ উইকেট নেয়ার পর ২৫০ রানও টপকালেন। সব মিলিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ২-০-তে এগিয়ে থাকা স্বাগতিকরা আরেকটি সুন্দর দিন কাটাল মাঠে।বাংলাদেশ এই প্রথম দুই ইনিংসেই ৩০০ কিংবা তার বেশি রান করল (প্রথম ইনিংসে ৫০৩)। সিরিজে তাদের রান হল ১,৮৫৮। যা একটি সিরিজে সর্বোচ্চ।দিনটা পুরোপুরি নিজের করে নিতে কোনো কার্পণ্য করেননি মুমিনুল। ১৩টি বাউন্ডারির সহায়তায় ১৮৯ বলে ১৩১ রানে অপরাজিত থাকেন কক্সবাজারের এই ক্ষুদে দৈত্য। নিয়মিত বিরতিতে বল সীমানা পার করার পাশাপাশি এক ও দুই রান করার সুযোগও হাতছাড়া করেননি তিনি। ৮৯-তে লেগ-বিফোরের আপিল থেকে রক্ষা পান মুমিনুল। রিভিউ তার পক্ষে যায়। নব্বইয়ের ঘরে জমে থাকেন তিনি ২৩ বল পর্যন্ত। শতকে পৌঁছেন পয়েন্ট ও শর্ট থার্ড-ম্যানের ফাঁক গলে বল দড়ির ওপারে পাঠিয়ে। টেস্টে টানা নয়টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস মুমিনুলের এক অনন্য অর্জন। এভারটন উইকস, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, ম্যাথু হেডেন, জ্যাক ক্যালিস, সাইমন ক্যাটিচ এবং কুমার সাঙ্গাকারার পাশে বসে গেলেন বাংলাদেশের মুমিনুল হক। শুধু কি তাই? উইকস, সুনীল গাভাস্কার ও মার্ক টেলরের পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুমিনুল নিজের প্রথম ১২ টেস্টে এগারোবার পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেললেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেঞ্চুরির দৌড়ে মুমিনুলের উপরে আছেন শুধু দু’জন- মোহাম্মদ আশরাফুল ও তামিম ইকবাল। এ দু’জনের ছয়টি করে টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে।দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে ১১৩ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল। মুশফিকুর চারটি চার ও দুটি ছয়ের সহায়তায় ৩০ বলে ৪৬ এবং মাহমুদউল্লাহ ২৮ বলে ৩০ রান করেন তিনটি চার ও একটি ছয়ের সৌজন্যে। মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ জুটিতে মাত্র ১০.৩ ওভারে যোগ হয় ৫৫ রান।(স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)

No comments

Powered by Blogger.