৪ মাস বেতন নেই লক্ষাধিক প্রাথমিক শিক্ষকের by সাবি্বর নেওয়াজ

এক লাখেরও বেশি প্রাথমিক শিক্ষক চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। গত বছর বেসরকারি নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে জাতীয়কৃত হয়েছেন তারা। এক সময় চাকরি সরকারি হওয়ার আনন্দে বিভোর এ শিক্ষকদের চোখে এখন শুধুই হতাশা। গত সেপ্টেম্বর থেকে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ। কেন বেতন বন্ধ সে সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্টভাবে কেউ কিছু বলছেন না। বেতন-ভাতা পাওয়ার আশায় তারা এখন মাসে কয়েকবার নিজ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ধরনা দিচ্ছেন। এমনই একজন সিরাজগঞ্জ সদরের মূলকান্দি মোল্লাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল মান্নান সমকালকে জানান, জাতীয়করণের আগে তারা নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত ছিলেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তারা আগস্ট মাসের এমপিওর টাকা পান। এরপর থেকে তাদের বেতন-ভাতা আটকে গেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের জানানো হয়, জাতীয়করণের কারণে তাদের চাকরি সরকারি হয়ে যাওয়ায় তারা আর এমপিওভুক্তির অর্থ পাবেন না। আবার তাদের সরকারি বেতনও চালু হয়নি। জাতীয়কৃত প্রাথমিক শিক্ষকরা সমকালকে জানান, চাকরি সরকারি, অথচ বেতন-ভাতা নেই_ এমনই এক দুর্বিষহ অবস্থায় তারা দিনাতিপাত করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্টে রয়েছেন। কয়েকজন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ অনুমোদন হয়ে না আসায় তাদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষকরা জানান, শুধু মাসিক বেতন-ভাতাই নয়, সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঘোষিত ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা
অন্য সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পেলেও নতুন সরকারি হওয়া এ শিক্ষকরা তা পাননি। এমনকি এই ভাতা তারা আদৌ পাবেন কি-না তা-ও অদ্যাবধি জানাতে পারেননি শিক্ষা কর্মকর্তারা।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সর্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, চার মাস ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন। কবে নাগাদ পাবেন সে তথ্যও দিতে পারছেন না মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের লোকজন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি হওয়া এসব বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের বরাদ্দ প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে না আসায় উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় তাদের বেতনের বিল করতে পারছে না। কবে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে তাও কারও জানা নেই।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহাসচিব হাফিজুর রহমান জানান, মন্ত্রণালয় থেকে এতদিন শিক্ষকদের বলা হয়েছে, জাতীয়করণের গেজেট হতে সময় লাগছে। তাই বেতন হচ্ছে না। নভেম্বরের ৩ তারিখে গেজেটও হয়ে গেছে। তারপরও আরও দুই মাস । তাই তারা এখন আন্দোলনে নামার কথা ভাবছেন। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাবিবুল আহসান বাবলু বলেন, এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এতই কম, তাদের নুন আনতে পানতা ফুরায়। এ অবস্থায় তারা চার মাস বেতন পান না। এমনকি গত ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজাতে বেতন না পেয়ে তাদের কষ্টে পার করতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ সমকালকে বলেন, 'নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এ শিক্ষকরা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক অধিদফতরের আওতাধীন ছিলেন। জাতীয়করণের পর তাদের এখনও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে ন্যস্ত করা হয়নি। সঙ্গত কারণেই তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে মানবিক বিবেচনায় তাদের এক মাসের এমপিওভুক্তি আগামী দু'চার দিনের মধ্যে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার হোসেন সমকালকে বলেন, 'সরকারি হওয়ায় এ শিক্ষকদের বেতন না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। দ্রুত তাদের বেতন-ভাতা ছাড় করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.