ভোটে কেউ বাধা দিলে 'উপযুক্ত শিক্ষা' দিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার উত্তরার আজমপুরে নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা করেন পিএমও
ভোটের আগেই জয় হয়ে গেছে_ এমন না ভেবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ কথা মনে করা যাবে না, প্রার্থী তো জিতেই যাচ্ছেন_ ভোট দিয়ে আর কী হবে? প্রতিটি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। সেসঙ্গে তিনি ভোটে কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের 'উপযুক্ত শিক্ষা' দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি আর যেন কেউ সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যেই ভোট দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা ও তা সুসংহত করতে হবে। আগামী নির্বাচন বন্ধ করতে অনেক ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশল চলছে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, একটি শ্রেণী নিজেদের বিশিষ্ট নাগরিক দাবি করলেও তাদের কাজই হচ্ছে গণতন্ত্র ধ্বংস করা। তারা বড় বড় কথা বলবেন, আর ষড়যন্ত্র করবেন। নির্বাচন বন্ধ করতে এ ধরনের বিশিষ্টজনের দেওয়া ফর্মুলার ব্যাপারে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার রাজধানীতে তিনটি নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন। সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইনশাল্লাহ নির্বাচন হবেই। তবে কেউ নির্বাচনে বাধা দিতে এলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
আন্দোলনের নামে বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধে মানুষ হত্যা ও সহিংসতা-নৈরাজ্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে নেমেছেন। এ জন্যই তিনি সাধারণ মানুষ, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের হত্যা করছেন। এ হত্যার বিচার একদিন বাংলার মাটিতেই হবে। আর বিরোধীদলীয় নেতা হবেন এ মানুষ হত্যার হুকুমের আসামি। নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঢাকা-১৫ আসনের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার, পল্লবীর হোসেন মোল্লা পার্ক মাঠে ঢাকা-১৬ আসনের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এবং উত্তরার আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের সমর্থনে আয়োজিত পৃথক তিনটি নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীতে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিলেন তিনি। এর আগে ফরিদপুর ও রংপুরে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
গতকালের প্রতিটি নির্বাচনী জনসভাই ছিল লোকারণ্য। নৌকা প্রতীক নিয়ে হাজারো নেতাকর্মী-সমর্থকের পাশাপাশি সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ এসব জনসভায় অংশ নেন। জনসভাস্থল ছাড়াও আশপাশের রাস্তায় দাঁড়িয়েও প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন অনেকেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভাস্থলগুলোতে পেঁৗছার অনেক আগে থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আশপাশের এলাকার মানুষ আসতে থাকেন। তারা নেচে-গেয়ে নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়ে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি করেন। এ অবস্থায় কোথাও বিরোধী দলের টানা অবরোধের লেশমাত্রাও ছিল না। সব জনসভা ও এর আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিও শোভা পেয়েছে।
এসব জনসভায় কারও নাম উল্লেখ না করে নির্বাচন পেছানোর সুপারিশ করায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'একটি গোষ্ঠী আছেন, গণতান্ত্রিক ধারা যাদের পছন্দ নয়। এ কারণেই তারা টকশোর নামে দেশ উদ্ধার করে বেড়াচ্ছেন। এক-এগারোর সময় যারা কিংস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তারা এখনও সক্রিয়। তারা ২০০৭ সালের মতো এবারও এক-এগারোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছেন। নির্বাচন বন্ধে অনেক কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট জামায়াতকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করায় দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। এ কারণে বিএনপি নেত্রীও নির্বাচনে আসেননি। কারণ জামায়াতপ্রীতি তিনি ছাড়তে পারেন না। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে অনেক চেষ্টা করেছি। ফোন করেছি এবং সংলাপে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত না থাকায় তিনি সমঝোতায় না এসে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র ও মানুষ খুনে মেতেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এক-এগারো ভুলে যায়নি। মানুষ ওই সরকার আর চায় না। গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। অন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ও দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোও কার্যকর করা হবে।
উত্তরার আজমপুরের জনসভায় অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মিরপুরের জনসভায় কামাল আহমেদ মজুমদার এবং পল্লবীর জনসভায় ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ সভাপতিত্ব করেন। জনসভাগুলোতে আরও বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, নগর নেতা আসলামুল হক আসলাম এমপি, দলের কেন্দ্রীয় নেতা একেএম এনামুল হক শামীম, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশারফ এমপি, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আখতার এমপি, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোখলেসুজ্জামান হিরু, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক রানাসহ স্থানীয় নেতারা।

No comments

Powered by Blogger.