রোকেয়া রফিক ৫ প্রশ্ন

থিয়েটার আর্ট ইউনিটের দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে ১৪ নভেম্বর শুরু হয়েছে ‘রঙ্গ হর্ষে বিংশ বর্ষে’ শিরোনামে নাট্যোৎসব। ১০ দিনব্যাপী এই উৎসব চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।


উৎসব প্রসঙ্গে এবারের পাঁচ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন থিয়েটার আর্ট ইউনিটের দলপ্রধান রোকেয়া রফিক। রোকেয়া রফিক বেবী নামেই তিনি পরিচিত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলতাফ শাহনেওয়াজ

থিয়েটার আর্ট ইউনিটের দুই দশক পূর্তিতে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
অনুভূতিটি নিঃসন্দেহে আনন্দের। ভালো মানের নাটক করব—এই অভিপ্রায়ে আমরা একদিন গড়ে তুলেছিলাম থিয়েটার আর্ট ইউনিট। বিগত ২০ বছরে দর্শককে কোর্ট মার্শাল, গোলাপজান-এর মতো অসংখ্য ভালো নাটক উপহার দিয়েছি আমরা। বেশ কয়েকজন নাট্যকার ও নির্দেশক তৈরি হয়েছেন। এসেছেন অনেক তরুণ নাট্যকর্মী। মিউজিক্যাল ড্রামার ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব একটি ঘরানা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে যে উদ্দেশ্যে নাট্যদল গড়ে তুলেছিলাম, তা অনেকাংশেই সফল হয়েছে বলে মনে করি। দুই দশক পূর্তিতে অনুভূতিটি শুধুই আনন্দের।

নাট্যোৎসবের শিরোনাম ‘রঙ্গ হর্ষে বিংশ বর্ষে’ কেন?
এই আয়োজনের শিরোনাম আমরা দিয়েছি ‘রঙ্গ হর্ষে বিংশ বর্ষে’। কারণ, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের ৪০ বছর অতিক্রমের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আমরা যখন দলের ২০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছি, তখন আমাদের সব আয়োজনের মধ্যে আমরা আনন্দের আবহ রাখতে চেয়েছি, আনন্দকে সবার ভেতরে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি। আমরা চেয়েছি, দুই দশক পূর্তির এই উৎসবকে কেন্দ্র করে তুমুল উচ্ছ্বাসে মেতে উঠুক সবাই।

উৎসবের পুরো আয়োজন সম্পর্কে বলুন।
১০ দিনের এই উৎসবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা ও পরীক্ষণ থিয়েটার হলের দুই মঞ্চে প্রতিদিন একাধিক নাটক মঞ্চস্থ হবে। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের ২১টি প্রযোজনা দেখা যাবে এ উৎসবে। এ ছাড়া প্রতিদিন বহিরাঙ্গনে থাকছে ঢাকঢোলের যুদ্ধ, লাঠিখেলা, জারিগান, লালনের গানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। রয়েছে সেমিনার। এবার নাট্যকার হিসেবে সৈয়দ শামসুল হক ও নির্দেশক হিসেবে বিভাষ চক্রবর্তীকে বিশেষ সম্মাননা দেব আমরা। কোর্ট মার্শাল নাটকের ২০০তম মঞ্চায়নও উদ্যাপিত হবে উৎসবের মাধ্যমে। তা ছাড়া পাবনার চাটমোহরের সমন্বয় থিয়েটারকে এ বছর প্রদান করা হবে এস এম সোলায়মান প্রণোদনা-২০১২। এভাবে সমাপনী দিন অগ্নিচক্র নৃত্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসবের পুরো অয়োজন।

উৎসবটি নাটকের। তবে নাট্যোৎসবের সঙ্গে থাকছে লাঠিখেলা, জারিগান, লালনের গান, শাহ আবদুল করিমের গান ইত্যাদি। নাট্যোৎসবের সঙ্গে এটি কতটা সংগতিপূর্ণ?
খুবই সংগতিপূর্ণ। জারিগান, লালনের গান, শাহ আবদুল করিমের গান আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অংশ। আর নাটকের মাধ্যমে তো আমরা সংস্কৃতি চর্চাই করে থাকি। এদিক থেকে দেখলে নাট্যোৎসবের সঙ্গে এই গানগুলোর সমন্বয় বেশ ভালোভাবেই হয়। আবার এই গানগুলোর মধ্য দিয়ে আনন্দও প্রকাশিত হয়। আগেই বলেছি, উৎসবটিকে আমরা আনন্দ ও নানা রঙের আবহে বর্ণিল করে তুলতে চেয়েছি।

থিয়েটার আর্ট ইউনিটের দুই দশক পূর্তি উৎসবে দলটির প্রতিষ্ঠাতা এস এম সোলায়মান নেই। তাঁর শূন্যতা কীভাবে অনুভব করেন?
না, আমরা কখনোই মনে করি না যে, এস এম সোলায়মান নেই। তিনি লোকান্তরিত হয়েছেন সত্যি; কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্যে। আমরা যখন তাঁর নির্দেশিত নাটক মঞ্চস্থ করি, প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি তাঁকে, তিনি বেঁচে ওঠেন। এভাবে তাঁকে অনুভব করতে করতে তাঁর দেখানো পথেই চলছি আমরা। এই উৎসবও সেই পথচলার ফসল। ফলে এস এম সোলায়মান সব সময় আমাদের বুকের ভেতরে চিরঞ্জীব। দুই দশক পূর্তি উৎসবের প্রতিটি ক্ষণেই তাঁর উপস্থিতি অনুভব করছি আমরা।

No comments

Powered by Blogger.