প্রাচ্যনাটের ১৫ বছর

১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। কয়েকজন তরুণ ও উদ্যমী নাট্যকর্মী মেতে ওঠেন সৃজনশীল কর্মানন্দে। গড়ে তোলেন একটি নাটকের দল। নাম প্রাচ্যনাট। প্রতিষ্ঠার পর দলটি মঞ্চে আনে তাদের প্রথম প্রযোজনা কাঁদতে মানা ।


নাটকটি রচনা করেন বৃন্দাবন দাস এবং নির্দেশনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম। নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে প্রাচ্যনাট জানান দেয় দেশের নাট্যাঙ্গনে নিজেদের পদচারণ। পরবর্তী সময়ে একের পর এক মঞ্চে আসতে থাকে বেশ কটি প্রযোজনা। অর্জন করতে থাকে দর্শকের ভক্তি ও ভালোবাসা। নাট্যামোদী দর্শকদের তারা উপহার দেয় রাজা এবং অন্যান্য, কইন্যা, কেনু কাহারের থেটার, এ ম্যান ফর অল সিজন, পুনর্জনম, গন্ডার, মায়ের মুখসহ বেশ কয়েকটি মঞ্চনাটক। পাশাপাশি মঞ্চে এনেছে লাশের দেশ, গর্ত, বিষ পাঁচালী, দড়ি খেলা, কৈবল্য, দুই বলদের গল্প, কাঁদতে মানা, জন্তু, দুই দুগুণে চার, ভ্রমরাসহ প্রায় ১৫টি পথনাটক। এ ছাড়া প্রাচ্যনাটের স্কুল অব অ্যাক্টিং থেকে এ পর্যন্ত ২৪টি ব্যাচের কর্মশালাভিত্তিক প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়েছে। এভাবে
হাঁটি হাঁটি পা পা করে সাহসী এবং সৃজনশীল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে প্রাচ্যনাট অতিক্রম করেছে দেড় দশকের পথযাত্রা। তাই তো এবার পথের মানুষদের পথ ছাড়তে বারণ করছে প্রাচ্যনাট। অর্থাৎ ‘পথ ছেড়ো না পথের মানুষ’ স্লোগান নিয়ে প্রাচ্যনাট আয়োজন করেছে তাদের ১৫ বছর পূর্তি উৎসব। আর এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। গত ফেব্রুয়ারিতে উৎসবটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে। তখন জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন ও পরীক্ষণ থিয়েটার হলের রূপসজ্জাকক্ষ ও সামনের খোলা জায়গাসহ আঙিনাজুড়ে আয়োজন করা হয়েছিল একটি দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা। রাহুল আনন্দের পরিকল্পনায় এই উপস্থাপনাটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অন্দরযাত্রা’। নাটক ও মঞ্চের পেছনের সব কর্মকাণ্ডের নানা ঘটনা, চিত্র ও গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই প্রযোজনা।
আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে তিন দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্ব। উৎসবের এই পর্ব উদ্বোধন করবেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। এ পর্বের অনুষ্ঠানমালায় থাকছে প্রাচ্যনাটের তিনটি পথনাটকসহ উদীচীর কামড়, অপেরার কৈবল্য, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (টিএসসি) একটি নন ফিকশন, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) চক্রগুহ, নাট্যভেদের রেভিলিউশন, ঐকিক থিয়েটারের শিরদাঁড়া, পথ নাটকসমূহের প্রদর্শনী। এ ছাড়া থাকছে বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী ও নাটকের গান। বছরব্যাপী উৎসব আয়োজন প্রসঙ্গে প্রাচ্যনাটের প্রধান আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা ১৫ বছর ধরে সৃজনশীল এবং সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছি। এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের কী অর্জন, তা পেছনে ফিরে দেখার চেষ্টা করছি এই উৎসবের মাধ্যমে। এটা একধরনের পেছন দিকে ভ্রমণ। একই সঙ্গে নতুন করে সৃজনশীল ও সাংগঠনিক কর্মোদ্দীপনায় নিজেদের আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে এই উৎসব।
উৎসবের অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে প্রতিদিন বেলা সাড়ে তিনটা থেকে। চলবে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.