আগে বলা হয়নি- মীম, আলু নয় আলো...!

তারকাদের বর্ণময় জীবনে থাকে বিচিত্র ঘটনা—কোনোটি বিশাল, কোনোটি সামান্য। এর মধ্যে এমন অনেক কিছু আছে, যা কাউকেই কখনো বলা হয়নি। আজ মীম শোনাচ্ছেন না-বলা সে রকম একটি ঘটনা


মায়ের নাম ছবি সাহা এবং বাবা বীরেন্দ্রনাথ সাহা। এখন আমি বিদ্যা সিনহা মীম হলেও বাড়িতে আমাকে সবাই টুকটুকি বলে ডাকত। বাবার চাকরিসূত্রে তখন আমরা থাকতাম ভোলায়। বাবা সেখানকার সরকারি কলেজের শিক্ষক। আমার মা একসময় গান করতেন। তাই মায়ের ইচ্ছা হলো, তাঁর বড় মেয়েটি গান শিখুক।
তো, স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরপরই আমাকে গান শিখতে পাঠানো হলো। গান শেখাতেন রিংকু দিদি নামের একজন। ভোলার ওয়েস্টার্ন পাড়ায় অবস্থিত আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে রোজ গান শেখাতেন তিনি। প্রথম প্রথম গান শেখাটা ভালোই লাগছিল। কিন্তু যখনই গানের সঙ্গে স্বরলিপিসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত হলো, তখনই ঘটল বিপত্তি। আমার তো আর গান শিখতে ভালো লাগে না! বিভিন্ন ছুতোয় গানের ক্লাস ফাঁকি দিতে থাকি।
তখন আমাদের স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের তোড়জোড় চলছে। আমার মা স্কুল কর্তৃপক্ষকে রাজি করিয়ে ওই অনুষ্ঠানে তাঁর মেয়ের একটি একক গান পরিবেশনের ব্যবস্থা করলেন। সে সময় আমি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি।
নির্দিষ্ট দিনে মঞ্চে গান গাইছি আমি—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা...।’
পাশে তবলা বাজাচ্ছেন আমার গানের শিক্ষক রিংকুদির ভাই তাপস দাদা। এদিকে মঞ্চের সামনে বসে আছেন মা, বাবাসহ আমার বন্ধুরা। গান তো গাইছি গলা দিয়ে, কিন্তু ঠক ঠক করে পা কাঁপছে কেন! এর মধ্যে কী যে হলো, সবকিছু কেমন জানি গুলিয়ে ফেললাম। আমি যতই গাই ‘আলো আমার আলো’; মুখ দিয়ে বেরোনোর সময় সেটি হয়ে যায় ‘আলু আমার আলু...!’ তবে ‘আলো’ যে বেমালুম ‘আলু’ হয়ে যাচ্ছে, তা ওই বয়সে ছোট্ট আমি বুঝতেই পারিনি।
এ সময় তাপসদা আমার গানের মধ্যে বাঁ হাত ঢুকিয়ে পাশ থেকে ফিসফিস করে বললেন, ‘মীম, ভুল হচ্ছে। আলু নয়, আলো, আলো...।’ তাপসদার কথা শুনে মাইক্রোফোনে গান গাওয়ার মধ্যে হঠাৎই বলে ফেললাম, ‘দাদা, কী বললে? কী ভুল হচ্ছে?’
এদিকে দর্শকসারিতে ততক্ষণে হাসির রোল পড়ে গেছে। আর আমার মায়ের মুখটি কালো মেঘের মতো।
ঘটনা কি এখানেই থেমে থাকে! এরপর স্কুলে আমাকে আলু নামে খেপাতে শুরু করল বন্ধুরা। পরে অবশ্য সংগীত প্রতিযোগিতায় দু-দুবার জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এই ঘটনার শোধ তুলেছিলাম আমি।
অনুলিখন: আ. শা.

No comments

Powered by Blogger.