রোড শোর নামে বিদেশ ভ্রমণে খরচ সাড়ে তিন কোটি টাকা by আবুল কাশেম

প্রবাসীদের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন বন্ডের প্রচার চালাতে লন্ডন ও নিউ ইয়র্কে রোড শো করবেন একদল সরকারি কর্মকর্তা। এর বাইরেও এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে বিনিয়োগ মেলার আয়োজন করে সেগুলোতে যোগ দেবেন তাঁরা।


আর এ জন্য সরকারের সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে তিন কোটি ৬৬ লাখ টাকা। প্রবাসীরা যাতে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করেন, সে জন্য প্রচার চালাতে কর্মকর্তারা এসব রোড শো ও বিনিয়োগ মেলার আয়োজন করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রোড শো ও বিনিয়োগ মেলা কোনো কাজেই আসে না। মূলত এসব উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অর্থে কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ নিচ্ছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, এসব পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আইআরডি। লন্ডন ও নিউ ইয়র্কে রোড শো এবং সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ওমান ও সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ মেলার আয়োজন করার পাশাপাশি গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন বাবদ তিন কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার সম্ভাব্য খরচ দেখিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব রোড শো বা বিনিয়োগ মেলা দেশের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। মূলত কর্মকর্তারা বিদেশে যাওয়ার জন্য নানা উপলক্ষ খোঁজেন। এখানেও তাই হবে। রোড শো ও বিনিয়োগ মেলার নামে কর্মকর্তাদের বিদেশে বেড়ানো ছাড়া আর কিছুই হয় না।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল মজিদ এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, রোড শো ও বিনিয়োগ মেলা দেশের জন্য কোনো কাজেই লাগে না। যে উদ্দেশ্যেই এটা করা হোক না কেন, এর কোনো সুফল মেলে না। মূলত রোড শো ও বিনিয়োগ মেলার নামে অনেক কর্মকর্তা একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পান। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়াতে রোড শোর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং নিয়মতান্ত্রিকভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে প্রবাসীরা এমনিতেই এসব বন্ডে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবেন। তা না করে রোড শো বা মেলা করে কোনো কাজ হবে না। কারণ, প্রবাসীরা এত সুখে নেই বা তাঁদের এত অলস সময় নেই যে তাঁরা কাজ ফেলে লন্ডন বা নিউ ইয়র্কে এসব রোড শো দেখবেন, আর বিনিয়োগ করবেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওই রোড শো ও বিনিয়োগ মেলাসংক্রান্ত প্রস্তাবে তাঁর মন্তব্যে লিখেছেন, 'খরচ একটু বেশি। রোড শোর পরিধি বিবেচনা করা দরকার।' এ বিষয়ে অর্থসচিব ফজলে কবির এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১১-১২ অর্থবছরের বন্ড বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। বিদেশে বিনিয়োগ মেলা ও রোড শো আয়োজন করার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন প্রচার করা গেলে এ বছর দুই হাজার কোটি টাকার বন্ড বিক্রি সম্ভব হবে। আগামী বছরগুলোতেও বন্ড বিক্রির পরিমাণ বাড়বে।
সূত্র মতে, লন্ডন রোড শোতে আইআরডির দুজন, জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের তিনজন, অর্থ বিভাগের একজন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন এবং দুজন শিল্পীসহ মোট ৯ জনের অংশগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। লন্ডনের হোটেলে তাঁদের তিন দিন থাকা-খাওয়া, দৈনিক ভাতা, বিমান ভাড়া, ভেন্যু ভাড়াসহ সম্ভাব্য খরচ দেখানো হয়েছে ৫১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। লন্ডনে জনপ্রতি বিমান ভাড়া হিসেবে এক লাখ ২৪ হাজার টাকা, প্রতিদিন একেক জনের হোটেলে থাকা-খাওয়া ২৬ হাজার টাকা, প্রতিদিন একজন কর্মকর্তার দৈনিক ভাতা বাবদ সাড়ে আট হাজার টাকার হিসাব দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া রোড শো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাউন্ড সিস্টেম ও ভেন্যু ভাড়া বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। আর নিউ ইয়র্কে ৯ জন কর্মকর্তা রোড শোতে অংশ নেবেন। সেখানে সম্ভাব্য খরচ দেখানো হয়েছে ৫৩ লাখ চার হাজার টাকা। লন্ডনের মতো নিউ ইয়র্কেও প্রত্যেকের বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া, খাওয়া খরচ, ভেন্যু ভাড়াসহ সব ক্ষেত্রেই সমান খরচ দেখানো হয়েছে।
আইআরডির প্রস্তাব অনুযায়ী, সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ওমান ও সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এসব মেলায় অংশ নেবেন ১১ জন করে। তাঁদের মধ্যে আইআরডি থেকে দুজন, সঞ্চয় পরিদপ্তর থেকে তিনজন, অর্থ বিভাগ থেকে একজন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিনজন এবং দুজন শিল্পীও অংশ নেবেন। ছয়টি দেশে মেলা আয়োজন এবং কর্মকর্তাদের বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া ও খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৭৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।

No comments

Powered by Blogger.