শিক্ষকদের জন্য প্যাকেজ-শিক্ষার্থীদের স্বার্থও বিবেচনাযোগ্য

বছরের শেষদিকে এসে মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলন জোরালো হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর মহাসমাবেশ ডেকেছেন তাঁরা। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে, শিক্ষামন্ত্রী তাই আগেই শিক্ষকদের জন্য ১২ দফা প্রস্তাবের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।


সংগত কারণেই এখন শিক্ষক সমাজের সঙ্গে প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ এসেছে। তাঁরা সরকারের কাছে যেসব দাবি উত্থাপন করে আসছেন, সেগুলোর মধ্যে কতগুলো পূরণ হয়েছে কিংবা প্যাকেজে উল্লিখিত সুবিধাগুলো শিক্ষকদের বাস্তবসম্মত চাহিদা পূরণে কতটা সহায়ক, সেই হিসাব করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দাবির ভিন্নতা এবং শিক্ষকদের অসংখ্য সংগঠনের কারণে তাঁদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়তো সম্ভব নয়। ফলে সরকার সুবিধাদি প্রদানের পরও এমনটা মনে করার কারণ নেই যে শিক্ষকদের অসন্তোষ মিটে যাবে। কারণ এর মধ্যে কাজ করছে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিও। অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের মতো সরকারি ও বিরোধী দল-অনুগত শিক্ষকদের সংগঠন রয়েছে। সরকারি দল সমর্থক সংগঠনগুলো যে প্রস্তাবে সন্তুষ্ট হবে, বিরোধী দল সমর্থক সংগঠনগুলো তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারে। এমনটাই দেখা গেছে সরকারের পক্ষ থেকে প্যাকেজ ঘোষণার পর।
বিরোধী দল সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। তারা চাইছে, শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করা হোক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই দাবি পূরণ করতে হলে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষকদের চাকরি ও সরকার থেকে প্রদত্ত সুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সেই প্রক্রিয়াই কার্যকর। বিশেষত গত চারদলীয় জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমপিওভুক্তি বন্ধ থাকার পর নতুন করে এমপিওভুক্তি হয়েছে বর্তমান সরকার আমলে। এখনো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি বাকি রয়ে গেছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা প্রয়োজন। শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসাভাতা একসময় সরকার থেকে দেওয়া হতো না, এখনো দেওয়া হচ্ছে। তবে যা দেওয়া হচ্ছে, তাকে অপ্রতুল বললেও কমই বলা হবে। তাই বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে শিক্ষকরা যা দাবি করছেন, তা যুক্তিসংগত। সরকারের উচিত বিষয়টির সম্মানজনক সমাধান করা। চাকরি জাতীয়করণের আরেকটি ধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের এই দাবিটি পূরণ করা প্রয়োজন। সরকারের উচিত চাকরি জাতীয়করণের ব্যাপারে সময় বেঁধে দেওয়া।
শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য কোটা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হওয়ার পরও শিক্ষিকাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস পর্যন্ত বাড়ানোর দাবিটি দীর্ঘদিনের। বর্তমান প্যাকেজে তা কার্যকর হওয়ার ঘোষণা প্রশংসার দাবিদার। একজন শিক্ষকের খেয়ে-পরে স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত হোক- এটাই কাম্য। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও যাতে তাঁদের কাছ থেকে যথাযথ শিক্ষা পায়, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ তেমন লক্ষণীয় নয়। শিক্ষকদের সাংগঠনিক শক্তি আছে বলে সরকার তাঁদের সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শ করে; কিন্তু মানসম্মত শিক্ষালাভের যে অধিকার শিক্ষার্থীদের রয়েছে তা যেন সরকার নিশ্চিত করে। এটাই গণদাবি।

No comments

Powered by Blogger.