আগামীতে ক্ষমতায় এলে বিএনপি-জামায়াত দুটো পদ্মা সেতু করবে? by রাহাত খান

পদ্মা সেতুর অর্থায়নে আবার ফিরেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের জন্য শুভ সংবাদ নিঃসন্দেহে। পদ্মা সেতু হলে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অবশিষ্টাংশের সংযোগ ঘটবে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক দূরত্ব এবং বৈষম্যই শুধু দূর হবে না পদ্মার বিশাল জলরাশি দ্বারা বিভক্ত দেশের এই দু’টি অঞ্চল,


এই সেতু বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ ঘটাবে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনসহ মধ্য এশিয়ার আরও কিছু কিছু দেশের। এক কথায় পদ্মা সেতু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের দুয়ার খুলে দেবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফেলবে বিশাল ইতিবাচক প্রভাব। এই সেতুর কল্যাণে বাংলাদেশের লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। মংলা বন্দর ছাড়াও তৃতীয় কিংবা ততোধিক সামুদ্রিক বন্দর তৈরির চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বছরে বাড়বে মোট জিডিরি আরও একাংশ বেশি। এ সবই নিঃসন্দেহে বিশাল অর্জন। পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবিসহ পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সবকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিরে আসার সংবাদে দেশে-বিদেশে থাকা বেশিরভাগ বাংলাদেশীই খুশি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থা ফিরে আসায় বাংলাদেশীদের, বেশিরভাগ, মনে ফিরে এসেছে আনন্দ ও স্বস্তি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন হয়ত বেশ খানিকটা দূরে। তবে সব হিসেব-নিকেশই বলে যে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নই বর্তমান সরকারের মেয়াদে শুরু হবে এবং ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে সেতু বাস্তবায়নের অন্তত ৩০/৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হবে। এটাও আগামী ভোটযুদ্ধে বর্তমান মহাজোট সরকারের জন্য শুভ ফলাফলই বয়ে আনবে বলে রাজনৈতিক ওয়াকিফহাল মহলের অভিমত। বাপের বেটি হাসিনা, করেই ছাড়ল, এই রকম একটা ধারণাও পদ্মার এপার-ওপারের লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। পড়া স্বাভাবিক।
তবে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা ফিরে আসায় বাংলাদেশের কিছু লোকের বুকটা যে ভেঙ্গে গেছে, এই বিষয়েও কোন সন্দেহ নেই। গভীর বিষাদ ও হতাশা বিরাজ করছে তাদের মনে। পদ্মা সেতুর অর্থায়নে জটিলতা ও অনিশ্চয়তা দেখে মনে মনে ভারি খুশী হয়েছিল ‘দিল হে পাকিস্তানী’ ঘরানার লোকজন। কিন্তু প্রকাশ্যে তো ক্রোধ ও হতাশা ব্যক্ত করার উপায় নেই। কারণ তেমন অবস্থায় গণপিটুনি খাওয়ার ভয় আছে। মিডিয়ার সার্বিক প্রতিক্রিয়াও চলে যেতে পারে তাদের বিপক্ষে। সুতরাং মুখে মিউমিউ করে হলেও ম্লান হাসিমুখে তাদের বলতে হয়েছে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসাটা ইতিবাচক বটে। খুব খুশি হয়েছি আমরা। খুব খুশি।
তবে পাক-ঘরানার এই লোকজন ‘দশ মাস সময় কেন নষ্ট করা হলো’ সেজন্য তাদের ভাষায় বর্তমান ব্যর্থ সরকারের উদ্দেশে তর্জন-গর্জন করতেও কিছু কম করছে না। তারা বলছে : সরকারের খামোকা এই সময়-ক্ষেপণ ক্ষমার অযোগ্য। ক্ষমতায় গেলে তারা এই অপরাধের জন্য দায়ী বক্তিদের শাস্তি দেবে। বোধকরি বিএনপির জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় বেড়েছে, এতে সন্দেহ নেই। তবে কতটা বেড়েছে, ক্ষমতাসীন হওয়ার ক্ষেত্রে সেটা যথেষ্ট কিনা, এই ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বুঝার উপায় নেই। কিন্তু একটি প্রভাবশালী ভারতীয় পত্রিকায় গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভের একটা ‘আশঙ্কা’ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় পত্রিকাটি এরপর যা বলেছিল সেটাই বোধ করি পরিবেশিত সংবাদটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। বলেছিল বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে দলটি (বিএনপি-জামায়াত জোট) ক্ষমতায় যেতে পারলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো আবার বাংলাদেশে আশ্রয় পাবে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য বাংলাদেশ হয়ে উঠবে অভয়ারণ্য। পাকিস্তান এবং ভারতের ভারাতবিরোধী জঙ্গী-সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আবার বাংলাদেশে তাদের খুঁটি গাড়বে এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালাবার সুযোগ পাবে।
কিছুদিন আগে ছাপা হওয়া প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল এই আশঙ্কা ও আতঙ্ক। কিন্তু বিএনপি ধরে নিয়েছে আগামী নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় আসছেই। যত প্রভাবশালী হোক কোন পত্রিকা বা গোয়েন্দা সংস্থা কোন দেশের রাজনৈতিক অবস্থার শেষ কথা বলে দিতে পারে না। কারণ সময়ে নানা ঘটনার অভিঘাতে রাজনীতিও পাল্টায়, বদলায়। কিন্তু ভারতীয় একটি পত্রিকার এই একটিমাত্র সংবাদে বিএনপি-জামায়াত জোট কিভাবে যে সুনিশ্চিত হলো, নির্বাচনে তারাই জিতবে সেটা তারাই শুধু বলতে পারে। ১৯৭০ সালে নির্বাচনের আগে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট ছিল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩৪ পার্সেন্টের বেশি ভোট পাবে না। বাকি ভোট পাবে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলো। সদরে আলা জেনারেল ইয়াহিয়া খান এই রিপোর্টে খুবই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এই কারণে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানব্যাপী একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পেরেছিল এবং সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র দুটি ছাড়া বাদ-বাকি সব আসনে জয়লাভ করেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। সাধারণত বেশিরভাগ গোয়েন্দা সংস্থা প্রায় সময়ই যেন-তেন প্রকারে এই ধরনের রিপোর্ট তৈরি করে। এর বহু দৃষ্টান্ত ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে তুলে ধরা যায়। তবে সেটা আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। তাই সেসব দৃষ্টান্ত তুলে ধরা থেকে বিরত হলাম। আমার এ প্রসঙ্গে যা মূল বক্তব্য তা হলো : সময়ই শুধু রাজনীতিতে জয়-পরাজয়ের শেষ কথাটা বলে দিতে পারে। আর কিছু নয়। অন্য কেউ নয়।
অথচ বিএনপি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে করা ভারতীয় প্রভাশালী পত্রিকার এই একটি সংবাদ থেকে ধরেই নিয়েছে আগামী নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় যাচ্ছেই। ক্ষমতায় গিয়ে তারা দেশ ও জনগণের জন্য কি করবে সে বিষয়ে দু’একটা প্রতিশ্রুতি দেয়া ছাড়া নির্দিষ্ট নির্বাচনী ইশতেহার তারা তৈরি করেনি। নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির সময় অবশ্য চলে যায়নি। নির্বাচন এখনও এক বছর তিন মাস বাকি। তবে এখন থেকেই বিএনপি এবং তার নেতা খালেদা জিয়া যেভাবে বক্তৃতা-বিবৃতিতে ক্ষমতায় গেলে কাকে ফাঁসিতে ঝোলাবেন, কার কোমরে রশি পরবে, কাকে জেল-হাজতে ঢোকাবেন ইত্যাদি বলে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তর্জন-গর্জন করছেন, তাতে মনে হয় আগামীতে ক্ষমতায় তারা যাচ্ছেনই।
পদ্মা সেতু নিয়ে দর কষাকষিতে দশ মাস কেন দেরি হলো, এ নিয়েও দলটির ইয়েস ম্যাডাম, ভারপ্রাপ্ত লোকটি তর্জন গর্জন করছেন। জানিয়েছেন ক্ষমতায় গেলে দশ মাস ‘নষ্ট’ করার অপরাধে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেবেন! সাত মণ ঘি তৈরি হয়নি, এখনই ‘রাধা’ নাচতে শুরু করেছেন। কোথায় যাই!
ভাবতে ইচ্ছে করে তারা যদি ক্ষমতায় থাকতেন তাহলে পদ্মা সেতুর দর কষাকষিতে কি করতেন? উত্তরটা খুবই সহজ। তাঁরা পদ্মা সেতু নির্মাণের ঝামেলায়ই যেতেন না! অন্য দেশ যোগাযোগ ব্যবস্থা অবারিত করার কারণে উপকৃত হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু ভারত উপকৃত হলে? কভি নেহি। কভি নেহি। ভারত উপকৃত হয় অমন কোন কাজ বিএনপি সরকার কখনও করবে না। ২০০১-২০০৬ শাসন পর্বে বিএনপি-জামায়াত সরকার এই মনোভাবের ‘থোরাসা’ নমুনা দেখিয়েওছিল। বাংলাদেশ প্রভূতভাবে উপকৃত হয় বিশ্বরোডের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারলে। কিন্তু বিশ্বরোড যে ভারত হয়ে যাবে! তার মানে বিশ্বরোডে সংযুক্তির কারণে ভারত উপকৃত হয়ে যায! কি ভয়াবহ ব্যাপার! বিএনপি-জামায়াত সরকার এমন সব শর্ত জুড়ে দিয়েছিল যে কারণে বিশ্বরোডের সঙ্গে তথা চীনসহ মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে স্থলপথে বাংলাদেশের অবাধ যোগাযোগের সংযোগ আর তৈরি হতেই পারল না! হ্যাঁ, বাংলাদেশের অর্থনীতি তাতে প্রভূত পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু তাতে কি! ভারতকে তো উপকৃত হতে দেয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। একই বিবেচনায় তারা মিয়ানমার-বংলাদেশ-ভারত গ্যাস-তেলের পাইপ লাইনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল। আর ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। হ্যাঁ বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিটের কারণে স্ফূরিত হতে পারত। কিন্তু জামায়াতের রক্তে তো বটেই বিএনপির রক্তেও যে ভারতবিরোধিতার বিষ। তারা বিশ্বাস করে মুক্তিযোদ্ধা এবং বাঙালীরা চাইলেও কি পাকবাহিনীর খপ্পর থেকে বাঁচতে পারত যদি ভারত তাদের সর্বাত্মক সাহায্যে এগিয়ে না আসত! এই পাকিস্তান-ভাঙ্গার ‘মর্মন্তুদ স্মৃতি’ কি ভোলা যায়!
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন প্রশ্নে বর্তমান সরকার যখন বিপদগ্রস্ত তখন বিএনপির খালেদা জিয়া দেশবাসীকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। ক্ষমতায় গেলে পদ্মার ওপর একটা নয়, দুটো সেতু বানিয়ে দেবেন।
কথাটা বিশ্বাস করতে পারলে ভালই ছিল। কিন্তু বিশ্বাস করার যে কোন উপায় নেই। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল। দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা এবং অর্থায়নের বিষয়ে আলাপ-আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছিল। পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়াটি বহুদূর এগিয়েছিল। এ সময় ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগ হেরে যায়। আর ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি-জামায়াত জোট। ক্ষমতায় গিয়েই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার অগ্রাধিকার হিসেবে প্রথম দফায় যা যা করেছিল তার একটি হচ্ছে পদ্মা সেতু নির্মাণের গোটা প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেয়া। আওয়ামী লীগ সরকার মেঘনার ধারে ৪৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ৯৮ ভাগ সম্পন্ন করে গিয়েছিল। প্রায় হয়ে যাওয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের দু’ভাগ সম্পন্ন করে দেশের বিদ্যুত-ব্যবস্থায় কিছুটা অবদান রাখা দূরে থাক, ক্ষমতায় এসেই বিএনপি-জামায়ত জোট সরকার সেই বিদ্যুত-কেন্দ্রটিই সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়েছিল!
ক্ষমতায় এসে এই বিএনপি-জামায়াত সরকার পদ্মার ওপর একটা নয়, দুটো সেতু নির্মাণ করবে? ‘শুনিলেও না হয় প্রত্যয়!’ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গিয়ে তো সব সময়ই অনৈতিক আচরণের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে আগের ক্ষমতাসীন সরকারের সব ভাল, জনকল্যাণমূলক কাজই নাকচ বলে ঘোষণা করে। তারা তো ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ প্রবর্তিত উপজেলা পদ্ধতিও বাতিল করে দিয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল স্বৈরশাসক এরশাদের করা কোন কাজই তারা বাতিল না করে ছাড়বে না।
খুবই গণতান্ত্রিক মনোভাব। কিন্তু বিএনপি কেন ভুলে যায় যতই গোঁজামিল দেয়ার চেষ্টা হোক, বাংলাদেশের আরও এক স্বৈরশাসক তো ছিলেন যার নাম জেনারেল জিয়াউর রহমান। বিএনপি দলের যিনি প্রবর্তক। স্বৈরশাসক হলেও এবং দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এরশাদ সাহেবই তো বাংলাদেশে উন্নয়নের প্রাথমিক অবকাঠামো, গ্রামে গ্রামে বিদ্যুত পাঠানো, জনশক্তি রফতানির চেষ্টা ইত্যাকার জনকল্যাণমুখী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তাঁর উপজেলা পদ্ধতিও নানা দুর্নীতি এবং বিচ্যুতি সত্ত্বেও গ্রাম-বাংলার প্রভূত কল্যাণ সাধন করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে উপজেলা পদ্ধতি পুনর্প্রবর্তন করেছিল।
পাশাপাশি বাংলাদেশের আরেক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান কি করেছিলেন? করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার ও পরিজনসহ যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেই হত্যাকারীদের বাঁচাতে সভ্যতা ও ইতিহাসের নিকৃষ্টতম, জঘন্যতম ‘ইনডেমনিটি’ আইন প্রণয়ন। সংবিধানে সন্নিহিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শসংবলিত চারটি স্তম্ভের তিনটিই কলমের এক খোঁচায় বাতিল করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর করা দালাল আইন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণের আইন বাতিল করেছিলেন এবং স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী দলকে পুনরুজ্জীবিত ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও যুক্তিযুদ্ধের স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের পাকিস্তানীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বিএনপি ও জামায়াত বরাবরই স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের সেই এজেন্ডাই বাস্তবায়নে উদগ্র চেষ্টায় রত আছে। বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ ও জঙ্গী-সন্ত্রাসী অধ্যুষিত দেশে পরিণত করাই তাদের একমাত্র টার্গেট। একমাত্র মিশন।
বাংলাদেশের জাগ্রত তরুণ সমাজই বিএনপি-জামায়াতের এই হীন প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে পারে। আমি মনে করি আগামীর ভোটযুদ্ধ হবে স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি বনাম বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দল ও জোট শক্তির লড়াই।
এই যুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে জিততে হবে। পরের সংখ্যায় জনকণ্ঠে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে রইল।

No comments

Powered by Blogger.