দাম বাড়ে, মান বাড়ে না by ইমদাদ হক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্য সমস্যায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে আবাসিক হলগুলোর ডাইনিংয়ের খাবারের মান। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩টি হলের ডাইনিং। নামেমাত্র চালু থাকা ডাইনিং এবং ক্যান্টিনে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করায় শিক্ষার্থীরা অপুষ্টিতে ভুগছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতেও খাবারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। খাবারমূল্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ চোখ পড়েনি।
১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি মাত্র ১৫০ শিক্ষার্থী নিয়ে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। তাদের বসবাসের জন্য রয়েছে ১২টি আবাসিক হল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বল্পমূল্যে খাবারের জন্য ডাইনিং ব্যবস্থা চালু ছিল। মাত্র ৩ বছর আগেও খাবারের প্রতিটি কুপনের মূল্য ৮ থেকে ১২ টাকা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু সাবসিডিয়ারিও দেওয়া হতো। তখন ডাইনিং ছিল জমজমাট। খাবারের মানও অনেক ভালো ছিল। কিন্তু গত দুই বছরে মীর মশাররফ হোসেন হল, জাহানারা ইমাম হল ও প্রীতিলতা হলের ডাইনিং বন্ধ হয়ে গেছে। আর বর্তমানে চালু থাকা ডাইনিং ও ক্যান্টিনে খাবারের মান এতই নিম্ন যে, তাতে শিক্ষার্থীদের নূ্যনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা ছুটছেন অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা হোটেলগুলোতে। এমনকি নিরুপায় হয়ে গড়ে তুলেছেন মেস। দীর্ঘদিন অপুষ্টিতে ভোগায় শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ডায়রিয়া, পেটের পীড়াসহ বহুবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চালু থাকা ডাইনিংগুলোও অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।
দুই বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ডাইনিংয়ে নিয়মিত খাবার খেত প্রায় ৩০০ ছাত্র। এখন এ সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ১০০-তে। মওলানা ভাসানী হলে ২৫০ থেকে ১২০ জনে নেমে এসেছে। কামাল উদ্দিন হলে ২০০ থেকে ১০০, সালাম-বরকত হলে ৩০০ থেকে ১১০, আল বেরুনী মেইন ভবনে ২৫০ থেকে ১৫০ ও বর্ধিতাংশ ভবনে ১২০ থেকে নেমে ৫০-এর কোটায় চলে এসেছে। ছাত্রীদের হলগুলোর মধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের ডাইনিংয়ের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। সেখানে ২০০-২৫০ ছাত্রী নিয়মিত খাবার খায়। তবে খালেদা জিয়া হল ও ফজিলাতুন্নেছা হলের ডাইনিংয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। কামাল উদ্দিন হলের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, 'গত ২ বছরে ডাইনিংয়ে খাবারের মান এসেছে শূন্যের কোঠায়। খাবারের নিয়মিত মেন্যুর তালিকায় রয়েছে পাঙ্গাশ মাছ আর ডিম। সঙ্গে রয়েছে পানির মতো ডাল। মাঝে মধ্যে তেলাপোকা, ছোট ছোট পোকাও পাওয়া যায়।'
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের বটতলা, বঙ্গবন্ধু হলের সামনে, কামাল উদ্দিন হলের সামনেসহ বিভিন্ন স্পটে গড়ে উঠেছে খাবার হোটেল। বর্তমানে ওই হোটেলগুলোতে খাবারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তিন টাকার ভাতের প্লেট হয়েছে ছয় টাকা, পাঁচ টাকার সবজি ১০ টাকা, ১৬ টাকার মাছের পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ১৬ টাকার মুরগির মাংসের পিস ৩০ টাকা ও ২০ টাকার গরুর মাংসের পিস হয়েছে ৪০ টাকা। এভাবে প্রতিটি খাবারের আইটেমের দাম দ্বিগুণ থেকে আড়াইগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাইনিংয়ের খাবারের নিম্নমান এবং দাম বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীরা। গত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকান মাালিক সমিতির সভাপতি নুরু বলেন, 'আগে আমরা দোকানের ভাড়া দিতাম ৩০০ টাকা। সেই দোকানের ভাড়া বর্তমান ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।' তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খাবারের দাম বাড়াতে হয়েছে। ডাইনিং বন্ধ হওয়া ও খাবারের মান সম্পর্কে প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়া বলেন, 'বাজারে দ্রব্যের দাম বেড়েছে। এত অল্প টাকায় খাবারের মান ভালো হয় না। আর ছাত্ররা ডাইনিংয়ে খায় না। তাই বন্ধ হয়ে গেছে।' বাইরের দোকানগুলোতে খাবারের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বাজারের দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করেন।
 

No comments

Powered by Blogger.