প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করুক-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী উত্ত্যক্তকরণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ মাসের ক্যাম্পাস-জীবনে ১০-১৫ বার উত্ত্যক্ত হতে হয়েছে। এ রকম উত্ত্যক্তের অভিযোগ করেছেন ২০ জন ছাত্রী। অভিযোগ ছাড়া দুঃখে-অপমানে গুটিয়ে গেছেন কতজন, তার হিসাব দেওয়ার কেউ আছে কি? প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
শেষ খবর হচ্ছে, প্রথম আলোয় এ-বিষয়ক সংবাদ প্রকাশের পর চার ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে বাকিদের বিষয়েও অনুরূপ শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী। শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের বেলায়ও মন্দের ভালো অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি; এবং সেটি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ আন্দোলনের কারণে। অথচ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে হয় যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই আছে। নইলে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, প্রতিবাদ করলে চড়-থাপড় মারার এহেন ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটতে পারে?
সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দখলদারি আর যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ যে হাতে হাত ধরে থাকে এবং ক্ষমতাসীন দলের অনুগত ছাত্রসংগঠনই যে এসবের হোতা, তা বলার জন্য আর প্রমাণের দরকার নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যারাই সন্ত্রাস-দাপট চালায়, যৌন নিপীড়কদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ও তারাই দেয়। বলা বাহুল্য, গুলি করে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া, নিয়মিতভাবে হল দখলের মহড়া চলার মতো ঘটনা যেখানে ঘটতে থাকে, সেখানে অব্যাহত উত্ত্যক্তকরণ চলতে থাকার পরিবেশ বিদ্যমান। যৌন নিপীড়ন রুখতে তাই সন্ত্রাসীদের দমন করাও জরুরি।
এর দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকেই নিতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের দাপটের বিষয়ে শিথিল। ইতিপূর্বে যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনগুলোর বেলায়ও তাদের এই শিথিলতা দেখা গেছে। আশা করি, তারা সতর্ক হবে এবং উত্ত্যক্তসহ যাবতীয় অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করে শাস্তি দেওয়া হবে। পাশাপাশি উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও অভিযোগ সেলের পূর্ণ বাস্তবায়নও ত্বরান্বিত হবে। দেখতে হবে, অভিযোগ সেলের মাধ্যমে তদন্তকাজে যেন দলনিরপেক্ষ এবং বিশেষত নারী শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.