একাত্তরের সুহূদদের স্বাগত ও অভিবাদন-মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা

এই মুহূর্তে যেসব বিদেশি বিশিষ্ট নাগরিক একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে ঢাকায় সমবেত হয়েছেন, তাঁরা কেবল বাংলাদেশের পরম সুহূদই নন, আমাদের আত্মার আত্মীয়। এই দেশটির স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁদের নিবিড় নৈকট্য ও গভীর ভালোবাসা।

৪০ বছর পর হলেও বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে তাঁদের সম্মান জানানো নিঃসন্দেহে গর্বের ও আনন্দের বিষয়।
একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশি নাগরিক নানাভাবে সহায়তা করেছেন, তাঁদের সম্মাননা জানানো আমাদের নৈতিক কর্তব্য ও মানবিক দায়িত্ব। কিন্তু এত দিনেও আমরা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার একাত্তরের সুহূদদের সম্মাননা জানানোর উদ্যোগ নেয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় পাঁচ শতাধিক বিদেশি নাগরিকের একটি তালিকাও প্রস্তুত করে। তবে একবারে এতজন বিদেশি নাগরিককে ঢাকায় এনে সংবর্ধনা জানানোর মতো লোকবল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সমর্থন না থাকার কারণে এবার ১৩২ জনকে সংবর্ধনা জানানো হচ্ছে বলে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এই সম্মানিত বিদেশি নাগরিকদের কেউ কলমে, কেউ সংগীতে, কেউ কূটনৈতিক মঞ্চে, কেউ বা সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে সক্রিয় ও প্রণোদনাশীল ভূমিকা রেখেছেন। ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। যেসব বিদেশি সুহূদ বেঁচে নেই, তাঁদের পক্ষে স্বজনেরা সম্মাননা নেবেন।
এই সংবর্ধনা উপলক্ষে সম্মানিত বিদেশি অতিথিরা যে দেশটির অভ্যুদয়ে অনন্য অবদান রেখেছেন, ৪০ বছর পর সেই দেশটির আর্থসামাজিক অবস্থাও স্বচক্ষে দেখবেন। অনেক সমস্যা ও সংকট সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা তাঁদের দেখাতে পারব বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, নয় সামরিক শাসনের নিগড়ে বন্দী কোনো দেশও। যতই ভঙ্গুর হোক না কেন, গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা জিয়ন রেখেছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
তবে এ কথাও স্বীকার করতে হবে, একাত্তরে আমরা যে জাতীয় ঐক্য ও শক্তির সমন্বয় ঘটাতে পেরেছিলাম, সেই ঐক্য ধরে রাখতে পারিনি। উত্তম হতো এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে করতে পারলে। তাহলে বিদেশি অতিথিরা দেখতে পেতেন এই বিজয়ী জাতির ঐক্য ও সংঘবদ্ধতার চেতনা অক্ষুণ্ন ও অটুট আছে।
৪০০ বছরের পুরোনো এই রাজধানী শহরে আমরা সম্মানিত বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানাই। তাঁদের সম্মাননা জানিয়ে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণ সম্মানিত হবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, তালিকাভুক্ত অন্যান্য বিদেশি অতিথিকেও যেন পর্যায়ক্রমে সম্মাননা জানানো হয়। কেননা, সম্মানিত বিদেশি নাগরিক ও তাঁদের স্বজনেরা ইতিমধ্যে এই সম্মাননার খবর পেয়ে গেছেন। তাঁদের আশাহত করা সমীচীন হবে না।
আবারও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সব সুহূদ ও সতীর্থকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই।

No comments

Powered by Blogger.