সিলেটে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী-দেশের ক্ষতি হলে টিপাইমুখ বাঁধ করতে দেব না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষতি হলে টিপাইমুখ বাঁধ করতে দেওয়া হবে না। এ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে কি না, তা বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। বাঁধ নিয়ে ভারতে যে সমীক্ষা হবে, ওই দলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে রাখতে হবে।’

গতকাল শনিবার সিলেটের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ১৪ দল আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গতকাল প্রথম সিলেটে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকালে তিনি ঢাকা থেকে ফেঞ্চুগঞ্জে পৌঁছে ১০টার দিকে শাহজালাল সার কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে ফেঞ্চুগঞ্জে ৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। সড়কপথে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে সিলেট পৌঁছে দুপুরে কুমারগাঁওয়ে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সিলেট সিটি করপোরেশনের নগর ভবন এবং আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় ও ভিসা সেন্টার নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের নিজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন। এর পর হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরানের (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করে প্রধানমন্ত্রী বিকেলে জনসভায় ভাষণ দেন।
বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর উদ্বোধন করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ‘সিলেটবাসীর জন্য উপহার’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশবাসীকে কিছু না কিছু দেয়।’ সিলেটবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দাবিদাওয়া করতে হবে না, বলতেও হবে না। নতুন নতুন উপহার নিয়ে আপনাদের কাছে আসব।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফেঞ্চুগঞ্জে সার কারখানা প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘আবার ক্ষমতায় এলে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করাসহ সিলেটের ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে।’
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অপদখলীয় ভূমি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ তার ভূমি রক্ষা করবে। ন্যায্য হিস্যা ভারতের কাছ থেকে আদায় করা হবে।’
‘সমুদ্রজয়’ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে মামলার জয় হয়েছে। আমরা সমুদ্রজয় করেছি। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের সমুদ্রসীমা নিয়ে রায় হবে। আইনি লড়াই চলবে। আমরা আবার ক্ষমতায় এলে এ রায়ও আমাদের পক্ষে আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘চারদলীয় জোট সরকারের আমলে গ্রেনেড-বোমা-সন্ত্রাস-খুন ছাড়া আমরা আর কিছুই পাইনি। কিন্তু আওয়ামী লীগের তিন বছরে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে। দেশ এখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব মন্দার মধ্যেও অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ (গতকাল) দুটো বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র উদ্বোধন করেছি। ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে সিলেট আসার পথে রাস্তার পাশে শুধু খাম্বা দেখেছি। বিদ্যুৎ নেই, খাম্বা ঠিকই রয়েছে। উনার (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) ছেলেরা খাম্বার ব্যবসা করত। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে তারা শুধু খাম্বা উৎপাদন করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথায় আছে চোরের মায়ের বড় গলা। তাঁর (খালেদা জিয়া) বেলায়ও হয়েছে এ রকম। বিএনপি শুধু নিয়েছে। টাকা-পয়সা বিদেশে পাচার করেছে। উনি (খালেদা জিয়া) জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। তাঁর দুই ছেলেও কালো টাকার মালিক হয়েছেন। তাঁর সময়ে অর্থমন্ত্রীও কালো টাকা সাদা করেছিলেন। এর চেয়ে লজ্জার কী হতে পারে। এত চুরি করেছেন, লজ্জা-শরমের বালাই নেই।’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমান সরকারের সফলতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে আরও ৫১টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুতের ব্যাপারে সরকার নতুন নীতিমালা নিয়েছে। যে এলাকা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, সে এলাকার মানুষের জন্য ১০ থেকে ২০ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ রেখে জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ করা হবে।’
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজসহ স্থানীয় সাংসদ ও ১৪ দলের নেতারা।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ যৌথভাবে জনসভা সঞ্চালনা করেন।

No comments

Powered by Blogger.