অনৈতিক উপহার - আড়ম্বর সংবর্ধনা দিয়ে কি অন্যায় ঢাকা যাবে?

নুন খেলে গুণ গাইতে হয়, সংবর্ধনা বা সোনার নৌকা উপহার পেলে করতে হয় আরও বেশি কিছু। ঝালকাঠির সাংসদ এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু সেটা করেছেন। তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবর্ধনা গ্রহণ করেছেন, সোনার নৌকা উপহার নিয়েছেন বলেও পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। যদিও সংবর্ধনা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তা অস্বীকার করেছে। ঘটনাটি তখন ঘটেছে যখন স্থানীয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থানীয় শাখা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেই উদ্যোগ থামিয়ে দিতেই যে এহেন সংবর্ধনার আয়োজন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংসদ জেনেশুনে কেন গেলেন? এখানে অন্যায় হলো একটি অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবর্ধনা গ্রহণ করে তাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা। খেয়াল করার বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকলে সোনার নৌকা আর বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকলে সোনার ধানের শীষ উপহার দেওয়া-নেওয়ার একটি চর্চা দেশে চালু হয়েছে। মূলত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেই এমন আদান-প্রদান হয়। স্পষ্টতই এটা ঘুষ দেওয়ার অভিনব কায়দা। এখানে তোষামোদকারী ক্ষমতাবানদের কৃপায় নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে অন্যায় আড়াল করতে সচেষ্ট থাকে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে’। যিনি বা যাঁরা এটা দিচ্ছেন এবং যিনি নিচ্ছেন, উভয়ে মিলে গোটা সমাজে কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। এটা চিন্তার বিষয়। খারাপ কাজের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হলো সামাজিকভাবে খারাপ কাজকে ভালো বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া। বিএনপির আমলেও আমরা দেখেছি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংসদেরা পর্যন্ত লজ্জার মাথা খেয়ে এ রকম অনৈতিক চর্চায় অংশ নিয়েছেন।
শিক্ষা নিয়ে অসাধু বাণিজ্যে রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা সুবিদিত। অথচ তাঁরাই আবার জনসভায় দাঁড়িয়ে, সংসদে দাঁড়িয়ে শিক্ষা ও নীতি-নৈতিকতার কথা বলতে বলতে পেরেশান হয়ে যান! এই কপটতা রাজনীতির গভীরতর এক অসুখ। এ থেকে সমাজকে মুক্ত করতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.