সংকুচিত হয়ে পড়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ছয় শতাংশ কমে গেছে। গত সপ্তায় ডিএসইতে দুই হাজার ৫১৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৫৬ কোটি টাকা কম।
তবে গত মঙ্গলবার ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে আইসিবির পক্ষ থেকে বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণ সমন্বয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে বিক্রি বা ফোর্সড সেল করছে না বলে দাবি করে।
অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানায়।
এসব ঘটনা বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আশান্বিত করে তোলে। এতে সপ্তাহের শেষ দিনে ডিএসইতে সাধারণ মূলসূচক ১৩৬ পয়েন্টের মতো বাড়ে। এভাবে সূচক বাড়ার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, অন্যদিনগুলোর মতো একসঙ্গে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার বিক্রেতা বা ক্রেতাশূন্য হয়ে না পড়াটা ছিল ভালো লক্ষণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে কিছু দিন চললে বাজার আবার স্বাভাবিক গতিধারা ফিরে পাবে। কারণ বাজার বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম বা মূল্য-আয় অনুপাত (পিই) গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় কারবারির মানসিকতার পরিবর্তে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে শেয়ার কিনলে বিনিয়োগকারীরা ভালো ফল পাবেন।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ নিরীক্ষিত বা অনিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী বাজারের পিই গড়ে এখন ১৩-এর ঘরে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ২০ জানুয়ারি বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ২৩ থেকে ২৪ পিই বাজারে বিনিয়োগের জন্য সহনীয়।
পিই: ডিএসইর সর্বশেষ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের গড় পিই ১০-এর ঘরে। রূপালী ও এসআইবিএল ছাড়া প্রায় সব ব্যাংকের পিই ২০-এর নিচে। অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের গড় পিই ১৭। এ খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ছয়টির পিই ২৫-এর ওপরে। মিউচুয়াল ফান্ডের গড় পিই ছয়-এর নিচে নেমে এসেছে। তবে প্রকৌশল খাতের পিই এখনো ২৫-এর বেশি। এ খাতের ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটির পিই ২৫-এর নিচে রয়েছে।
বাজার পরিস্থিতি: সব মিলিয়ে গত সপ্তাহে ডিএসইর সাধারণ সূচক কমেছে ৩৭২ পয়েন্ট। সপ্তাহের শুরুতে রোববার সূচক ছিল পাঁচ হাজার ৮০০ পয়েন্ট, যা সপ্তাহ শেষে ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ কমে পাঁচ হাজার ৪২৮ পয়েন্টে দাঁড়ায়। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক গত সপ্তাহে এক হাজার ছয় পয়েন্ট কমে। সপ্তাহের শুরুতে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে সূচক ছিল ১৬ হাজার ৩৩০ পয়েন্ট, সপ্তাহ শেষে যা ১৫ হাজার ৩২৪ পয়েন্টে নেমে আসে। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে ২৬০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩০টির ও কমেছে ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের। ডিএসইতে গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৫১৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ কম। এ সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন ৫ দশমিক ১০ শতাংশ কমে দুই লাখ ৫০ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

No comments

Powered by Blogger.