সমর্থকদের দুঃখ বোঝেন সিডন্স

রাতের চট্টগ্রাম আর সকালের চট্টগ্রাম এক হলো না ক্রিকেটারদের কাছে। আগের রাতে বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দর থেকে হোটেলে ফেরার পথে পেলেন ফুলেল সংবর্ধনা। আর কাল সকালে অনুশীলন করতে মাঠে যাওয়ার জন্য হোটেল থেকে বেরিয়ে দেখতে হলো এক সমর্থকের অশালীন অঙ্গভঙ্গি!
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাসে ঢিল ছুড়ে মারার মতো এটাও একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে ‘উগ্রবাদী’ সমর্থকদের ঢিল ছোড়া, জুতো দেখানো বা অমন অঙ্গভঙ্গি করার মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা থেকে বিশ্বকাপকে মুক্ত রাখাটা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৎপর পুলিশ তাই সঙ্গে সঙ্গেই পাকড়াও করেছে ওই সমর্থককে। পরে অবশ্য কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট-পাগল দর্শক আলোচনায়। বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুন সাজে সেজে ওঠা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে তাদের স্লোগানমুখর বর্ণিল উপস্থিতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রিয় দলের ব্যর্থতায় সেই দর্শক-সমর্থকেরই একটা অতি ক্ষুদ্র অংশ যখন হাতে ঢিল তুলে নেয়, সেটিরও সমালোচনা বাদ থাকবে কেন? কেউ কেউ তো লিখল, বাংলাদেশ থেকে নাকি বিশ্বকাপের ম্যাচই সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে আইসিসি! আইসিসির প্রধান নির্বাহী হারুন লরগাত সেই ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছেন এর মধ্যেই।
ক্রিকেটারদের প্রতি ক্ষোভকে আক্রোশে পরিণত করা সমর্থকেরা যে বাংলাদেশ দলের মোট সমর্থকের হাজার ভাগের এক ভাগও নয়, সেটা সবাই জানে। কাল বাংলাদেশ দলের অস্ট্রেলিয়ান কোচ জেমি সিডন্সও প্রশংসাই করলেন এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের। গত আড়াই বছরের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের দর্শকদের তো অন্তত ক্রিস গেইলদের চেয়ে ভালো চেনেন সিডন্স, ‘এখানকার দর্শক সব সময়ই ভালো। তবে গত ম্যাচে আর সবার মতো তারাও হতাশ হয়েছে। কিন্তু খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি খারাপ তো কারোরই লাগেনি। আমার মনে হয় মানুষের এটা বোঝা উচিত, হয়তো তারা তা বোঝেও।’
ক্ষোভ জানাতে গিয়ে কারও কারও অতিপ্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠাটাও স্বাভাবিক ঠেকছে কোচের চোখে, ‘এ রকম খারাপ খেললে অনেকেই প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সারা বিশ্বেই এটা হয়। এ দেশের মানুষ ক্রিকেটের অনেক বড় সমর্থক, বাংলাদেশ দলের বড় সমর্থক। গতকাল (পরশু) যখন চট্টগ্রামে এলাম, বিমানবন্দরেও একই দৃশ্য দেখেছি—অবিশ্বাস্য সমর্থন।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউটে শোকস্তব্ধ দর্শকদের আশার বাণী শুনিয়েছেন বাংলাদেশের অস্ট্রেলীয় কোচ। বাংলাদেশে থাকতে থাকতেই হয়তো আশাবাদের শেষটা হলো এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে, ‘আমরা জানি সবাই হতাশ, সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত খেলোয়াড়েরাই। সমর্থকদের বুঝতে হবে, এরাই বাংলাদেশের সেরা ১৫ ক্রিকেটার। তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছে। আগের ম্যাচে খারাপ খেললেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ভালো ক্রিকেট খেলতে চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।’
এই প্রতিজ্ঞা দলের মধ্যেও আছে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের লজ্জাজনিত বিব্রতভাব কাটিয়ে ওঠাটা একটু যেন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে সব খেলোয়াড়ের জন্যই! কোচ সেটা মানছেন, সঙ্গে খেলোয়াড়দের বিব্রত করার কিছুটা দায়ভার তুলে দিলেন সমালোচকদের কাঁধে, ‘সাবেক খেলোয়াড়েরা যেভাবে সমালোচনা করছেন, তাতে দলের অনেক খেলোয়াড়ই হতাশ। অনেক সাবেক খেলোয়াড় আমার সম্পর্কেও মন্তব্য করেছেন। আশা করি তাঁরা সামনে এসে কথা বলার সাহস রাখবেন।’
আগের দিন নিজের লেখা কলামে প্রায় একই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কাল কোচও যখন কথাটা বললেন, বাংলাদেশের বিশ্বকাপটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠার লক্ষণই পাওয়া যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.