‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা নিয়মিত খেলতে চাই’

জীবনে কোনো দিন টেস্ট খেলেননি। তার পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক পরিচিত মুখ স্টিভ টিকোলো। একেক করে বিশ্বকাপেও খেলে ফেলেছেন ২৩টি ম্যাচ। আইসিসির কোনো সহযোগী সদস্য দেশের খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের মতো আসরে এতগুলো ম্যাচ খেলাও দারুণ অর্জনের মধ্যেই পড়ে। অনেকে তাঁকে টেস্ট না খেলা সেরা ক্রিকেটার হিসেবে অভিহিত করতে পছন্দ করতেন। সেই টিকোলো যেন এ মুহূর্তে অসহায়ভাবেই অবলোকন করে যাচ্ছেন নিজ দেশের ক্রিকেটীয় দৈন্য। তবে, দৃঢ়তার সঙ্গেই তিনি জানিয়েছেন, কেনিয়া বা ক্রিকেটে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই আইসিসির সামনে।
কেনিয়া সর্বশেষ কোনো টেস্ট দলের বিপক্ষে বিশ্বকাপের বাইরে সিরিজ খেলেছিল ২০০৬ সালে। বাংলাদেশের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছিল কেনিয়ার ক্রিকেটের দুঃস্বপ্নের যাত্রা। মাঝখানে খেলোয়াড় বিদ্রোহ, ক্রিকেট বোর্ডের ব্যর্থতা, আন্তর্জাতিক ম্যাচের সুযোগ হীনতা—সব মিলিয়ে কেনিয়ার ক্রিকেট রীতিমতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তেই এসে দাঁড়িয়েছে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট ও এককালের জায়ান্ট কিলার হিসেবে পরিচিত দেশটির চলমান বিশ্বকাপে শোচনীয় প্রদর্শনী।
একটি দেশের ক্রিকেট আট বছরের ব্যবধানে যেখানে উন্নত হবে, সেখানে কেন এই অধঃপতন? এ প্রশ্নের জবাব টিকোলো দিয়েছেন দারুণ হতাশার সঙ্গেই। তিনি বলেছেন, ‘২০০৩ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে আমাদের দেশের ক্রিকেট যে গতি এগোনোর কথা ছিল, সে গতিতে এগোয়নি। অনেক কারণ এর সঙ্গে জড়িত। তবে আমার মনে হয়, নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে না পারাই কেনিয়ার ক্রিকেট পিছিয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ।’ তিনি বলেন, কেনিয়ার বর্তমান বিশ্বকাপ দলের নয়জনই এ প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন উত্তাপ গায়ে মাখছে, এদেরকে তো একটু সময় দিতে হবে। আপনি যেখানে সুইমিং পুলেই ভালো সাঁতার কাটতে পারছেন না, সেখানে আপনাকে যদি সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়া হয়, আপনার অবস্থা তো শোচনীয় হবেই।
‘টেলিভিশনে শোয়েব আকতার, লাসিথ মালিঙ্গা কিংবা মুত্তিয়া মুরালিধরনের বোলিং দেখাটা খুবই আনন্দদায়ক। কিন্তু, তাঁদের বল যখন আপনি খেলছেন, তা তো কঠিন ব্যাপার হবেই।’ টিকোলোর মন্তব্য।
স্টিভ টিকোলো আইসিসির প্রতি ক্রিকেটে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর প্রতি বাড়তি নজর ও সহানুভূতি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বেশি করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েই কেবল আইসিসি আমাদের ক্রিকেটের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০০২-০৩ সালের দিকে ভারতের এ দল নিয়মিত কেনিয়া সফর করত। আমরা সে সময় তাদের সঙ্গে খেলে দারুণ উপকৃত হয়েছিলাম। কিন্তু, কোনো কারণে সেই সফরটি এখন আর হয় না। প্রতিটি টেস্ট খেলুড়ে দল যদি নিয়মিত তাদের একাডেমি কিংবা এ দলকে কেনিয়া সফর করাত, তাহলে আমাদের ক্রিকেটাররা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারত। বিশ্বকাপেই কেবল আমরা শীর্ষ দেশগুলোর সঙ্গে খেলার সুযোগ পাই। এমনকি আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেও খেলার সুযোগ পাই না।’
আজ কানাডার সঙ্গে খেলতে নামার আগে দলের কাছে কেবল ভালো ক্রিকেটটাই চান টিকোলো। তিনি বলেন, আজই সুযোগ হারানো গৌরবটা কিছুটা হলেও ফিরে পাওয়ার। তিনি আশা করেন, আজকের ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে জিতে কেনিয়া দল তাদের সমর্থকদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফোটাবে।

No comments

Powered by Blogger.