নজিরবিহীন দরপতন খতিয়ে দেখতে তদন্ত্ত কমিটি গঠন

দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন দরপতনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে প্রধান করে গতকাল বৃহস্পতিবার চার সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন নির্বাহী পরিচালক এ টি এম তারিকুজ্জামান, পরিচালক মাহবুব আলম ও সহকারী পরিচালক তানিয়া শারমিন। এ কমিটিকে আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে গত বুধবার যেভাবে সূচক কমেছে, তা মোটেও স্বাভাবিক নয়। তাই এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে এ ঘটনার পেছনে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেয়ারবাজারে ১৯৯৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ ধসের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে বুধবার। ওই দিন লেনদেন শুরুর সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৫৪৭ পয়েন্ট বা প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমে যায়। দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সূচক পতনের এ নজিরবিহীন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে। ঘটনাটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এতটাই আতঙ্কের জন্ম দিয়েছিল যে, তাঁরা লেনদেন ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এমনকি গাড়ি ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনা ঘটান তাঁরা।
অবশ্য বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির দ্রুত পদক্ষেপে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এ সময় দুই ঘণ্টার মধ্যে সূচক আবার প্রায় ৫৮৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে দিনশেষে সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৩৪ পয়েন্ট কমে আট হাজার ৪৫১ পয়েন্টে নেমে আসে।
জিয়াউল হক খোন্দকার সূচকের এ উত্থান-পতনের ঘটনাকে তাৎক্ষণিকভাবে অস্বাভাবিক বলে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই দিন তিনি তাঁকে অবহিত না করে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা জারির অভিযোগে সদস্য মনসুর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
জানা গেছে, গতকাল মনসুর আলম নোটিশের জবাব দিয়েছেন। তবে এতে তিনি কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা জানা যায়নি।
মনসুর আলমের উদ্যোগে জারি করা নির্দেশনায় কোনো বিনিয়োগকারী হাতে থাকা শেয়ার আগে বিক্রি না করে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে অন্য কোনো শেয়ার কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এর আগে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনে পরে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে আর্থিক সমন্বয় করতে পারতেন। বাজার সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করেন, এ নির্দেশনাটির কারণে বাজারে প্রচলিত আর্থিক সমন্বয়সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়, বাজার পতনের পেছনে যা বড় ভূমিকা রাখে।
এদিকে, ব্যাপক দরপতনের পরের দিন গতকাল বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এদিন দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের চেয়ে কমে গেছে।
জানা গেছে, গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই এসইসি ও ডিএসই অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় ছিল। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দিনভর বাজারের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে মৌখিকভাবে শেয়ার ক্রয়প্রবণতার মধ্যে থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়। এসব কারণে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সকাল থেকে শেয়ার বিক্রির পরিবর্তে কেনার দিকে বেশি ঝুঁকেছিলেন। ফলে বাজারে শেয়ারের চাহিদা তৈরি হয়ে দামও বাড়তে থাকে।
দিনশেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১২৯ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশ বেড়ে হয়েছে আট হাজার ৫৮০। এদিন বাজারে লেনদেন হওয়া ২৪২টি কোম্পানির মধ্যে ২২০টির দাম বাড়ে। কমেছে শুধু ২২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৬২৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৪৬ কোটি টাকা কম। দরপতনের দিনেও ডিএসইতে প্রায় এক হাজার ৯৬৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.