জরুরি অবস্থার মধ্যেই শ্রীলঙ্কায় মুসলিমদের ওপর হামলা

জরুরি অবস্থা জারির পরও শ্রীলঙ্কায় মুসলিমদের ওপরে হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার জরুরি অবস্থা জারির পর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মুসলিমদের একটি দোকান, হামলা হয়েছে একটি মসজিদে। ওই মসজিদটিতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়, কয়েকদিন ধরে স্থানীয় বৌদ্ধ ও সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এক পর্যায়ে তা দাঙ্গায় রূপ নেয়। এ অবস্থায় মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট মাইথিরিপালা সিরিসেনা জরুরি অবস্থা ও কারফিউ জারি করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে এগারটায় মধ্যাঞ্চলীয় শহর কান্দির একটি দোকানে আগুন দেয়া হয়। পাহাড়ি শহর কান্দির কাছের গ্রাম মাদাওয়ালা। সেই গ্রামের একজন বাসিন্দা মোহাম্মদ মানাজির। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, একটি ভবনে আগুন দেয়ার খবর শুনতে পাই। এরপর  বাইরে আসি আসলে কি ঘটেছে তা দেখতে। এ সময় দেখতে পাই বিশাল এক অগ্নিগোলক। তিনি বলেন, ওই এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সফলতার সঙ্গে আগুন নিভিয়ে ফেলেছে দমকল বাহিনী। মাদাওয়ালা এলাকায় এ ছাড়া বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি। স্থানীয় অনলাইন গ্রাউন্ড ভিউজ বলছে, কান্দি শহরের উত্তর-পূর্বদিকে অবস্থিত ওয়াতেগামা গ্রাম। সেখানে একটি মসজিদে হামলা চালিয়েছে দাঙ্গাবাজরা। কলম্বোভিত্তিক এই ওয়েবসাইট তাদের টুইটারে বেশকিছু ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, মসজিদটির ভাঙাচোরা কাঁচের দরজা। চেয়ারগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে একজন মানুষকে দেখা যায়। তিনি হামলার সময় মসজিদটির ভেতরে ছিলেন। গ্রাউন্ড ভিউজের ওই ভিডিও ক্লিপে তাকে বলতে শোনা যায়- দাঙ্গাবাজরা মসজিদে হামলা করেছে। পুলিশ গুলি ছুড়ছে।
উল্লেখ্য, কান্দি এলাকায় সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা মুসলিমদের বিভিন্ন স্থাপনার ওপর হামলা চালিয়ে আসছে কয়েকদিন ধরে। তারা সংখ্যালঘু মুসলিমদের মসজিদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করছে। বলা হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগে কয়েক জন মুসলিম একজন বৌদ্ধকে প্রহার করে। এতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় সহিংসতা। পুলিশ বলছে, আরো সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য সোমবার কান্দিতে কারফিউ জারি করে পুলিশ। এরপর গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক ডজন মানুষকে। মঙ্গলবার ভস্মীভূত একটি দালানের  ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় এক মুসলিমের মৃতদেহ। এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ১০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেন। এ সময় তিনি বলেন, দেশের কোনো কোনো এলাকায় নিরাপত্তার যে অসন্তোষজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার প্রেক্ষিতে জারি করা হচ্ছে জরুরি অবস্থা। সমাজের অপরাধীদের ধরতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা জরুরিভিত্তিতে ফিরিয়ে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে উপযুক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালের পর এটাই শ্রীলঙ্কায় প্রথম জরুরি অবস্থা।

No comments

Powered by Blogger.