ছিনতাইকারীর কবল থেকে বাঁচতে...

ফিল্মি দৃশ্যের চেয়েও ভয়ঙ্কর। ফ্লাইওভারের ওপর সিএনজি অটোরিকশায় তরুণ-তরুণী। দু’পাশে সারিবদ্ধ মোটরসাইকেল যোগে ছিনতাইকারী। দলবেঁধে ফ্লাইওভারে অবস্থান নিয়েছিল ছিনতাইকারীরা। ভয়াবহ একটি মুহূর্ত। ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে লাফ দেন দু’জনেই। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারে। ফ্লাইওভারে অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন তারা। আহতরা হচ্ছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র ছাত্র জামিল বিন রহমান (২০) ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্রী আদিতি (২০)। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। জামিলের ঘনিষ্ঠরা জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন দু’জন। অনুষ্ঠান শেষে সিএনজি অটোরিকশাযোগে সিদ্ধেশ্বরী যাচ্ছিলেন তারা। উদ্দেশ্য সিদ্ধেশ্বরীতে আদিতিকে নামিয়ে দিয়ে ধানমন্ডির বাসায় ফিরবেন জামিল। সিএনজি অটোরিকশায় উঠার পর একাধিক ফোনে কথা বলেছিল চালক। কথাগুলো ছিল সন্দেহমূলক। সিএনজি অটোরিকশায় উঠার কিছু সময় পরেই চালক ফোনে কোনো একজনকে বলছিল, ‘হুম, ঠিক আছে। আমি দুজন যাত্রী নিয়ে আসতেছি। ফ্লাইওভার দিয়ে সিদ্ধেশ্বরী যাব।’ ফ্লাইওভারে উঠার কয়েক মিনিট আগে আবার ফোনে কথা বলছিল চালক। অপরপ্রান্তের ব্যক্তিকে বলছিল, ‘ফ্লাইওভারে উঠতেছি।’
ফ্লাইওভারে উঠার পর ধীর গতিতে চলছিল সিএনজি অটোরিকশা। অন্যদিনের চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা ছিল কম। এর মধ্যেই জামিল ও আদিতি তাকিয়ে দেখেন দুই পাশে সারিবদ্ধ মোটরসাইকেল। চারটি মোটরসাইকেল যোগে ছয়-সাতজন অনুসরণ করছিল সিএনজি অটোরিকশাকে। এতো ধীরে চালাচ্ছেন কেন, দ্রুত টানেন বলতেই চালক তার আসল চেহারা প্রকাশ করে। হুমকি দিয়ে বলে, ‘যদি বাঁচতে চান, যা আছে সব দিয়ে দেন। নইলে দেখছেন তো। কোনো চালাকি করবেন না। একদম জানে মেরে ফেলবো।’
উপায় না দেখে সিএনজি অটোরিকশা থেকে লাফ দেন দু’জনেই। এতে আহত হন তারা। ঘটনার পরপরই ফ্লাইওভারে ও আশপাশে ভিড় বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
জামিলের বরাত দিয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, চালক হুমকি দেয়ার পর ভয়ে তারা লাফ দেয়। চালকের কাছে অস্ত্র ছিল কি-না অন্ধকারে তা দেখতে পায়নি তারা। হুমকি ও হাবভাব দেখে ভয় পেয়ে যায়। লাফ দিয়ে ফ্লাইওভারের রাস্তায় পড়ে আহত হয় তারা। তরুণ-তরুণী লাফ দিয়ে পড়লে সিএনজি অটোরিকশা দ্রুত পালিয়ে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি বলে জানান ওসি। জামিলের ঘনিষ্ঠরা জানান, দু’জনেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।  হাত-পা, মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছেন জামিল ও আদিতি। আহত জামিল বিন রহমানের বাসা ধানমন্ডি এবং আদিতির বাসা সিদ্ধেশ্বরীতে।
রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.