উত্তপ্ত পরিস্থতিতে যুক্তরাজ্য সফরে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স

যুক্তরাজ্যে তিন দিনের সফর শুরু করেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। ক্ষমতা গ্রহণের পর তার এই প্রথমবিশ্ব সফরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা জানিয়েছে বৃটেন। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের ব্যাপক ভূমিকা থাকায় তার সফরকে ঘিরে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করেছেন সালমান। তিন দিনের এই সফরে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র সঙ্গে ইয়েমেন নিয়ে আলোচনা ও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর সঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা রয়েছে ৩২ বছর বয়সী এই ক্রাউন প্রিন্সের।  এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, তার সফরকে ঘিরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদির প্রাণঘাতী ভূমিকা থাকার কারণেই মূলত এই বিক্ষোভের আশঙ্কা। প্রসঙ্গত, ইয়েমেনে সরকারি  বাহিনী ও হুতি বিদ্রহীদের মধ্যকার গৃহযুদ্ধে সরকারি বাহিনীর পক্ষ নিয়ে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য সমর্থিত আন্তর্জাতিক সৌদি জোট। জোট বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ইয়েমেনর হাজারো বেসামরিক নাগরিক। সৌদি আরবের সঙ্গে অর্থনৈতিক সমপর্ক জোরদার করতে চায় যুক্তরাজ্য।
সৌদির বর্তমান বাদশা সালমানের উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয় ক্রাউন প্রিন্স সালমানকে। ক্রাউন প্রিন্সের পদ ধারণের পর এটাই তার প্রথম যুক্তরাজ্য সফর। ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর থেকেই দেশের নান আইন ও প্রচলিত নিয়মের নানা সংস্কারের দিকে জোর দিচ্ছেন সালমান। রক্ষণশীলতার গণ্ডি পেরিয়ে আধুনিকমনা করে তোলার চেষ্টা করছেন দেশকে। এসব সংস্কারের মধ্যে রয়েছে, নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার, স্টেডিয়ামে খেলা দেখার অধিকার ও সিনেমা দেখার অধিকার দেয়া। এসবের পাশাপাশি তিনি একটি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানও পরিচালনা করেছেন। তার ওই অভিযানে, দেশের প্রভাবশালী ধনবান ব্যবসায়ী ও প্রিন্সদের আটক করা হয়। পরবর্তীতে ব্যাপক অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাদের অনেককে ছেড়েও দেয়া হয়। সৌদি প্রিন্স ইয়েমেনেও নতুন কৌশল অনুসরণ করেন। কাতারের ওপর অবরোধ জারি করেন। অনেকেই তার এই পদক্ষেপগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছে।
যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই সফর!
বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়, মোহাম্মদ বিন সালমান দেশটির প্রধান নন, দায়িত্বও নিয়েছেন মাত্র নয়মাস হলো। কিন্তু তার এই সফর যুক্তরাজ্যের জন্য ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। কেননা, তিনি সৌদি আরবের নেপথ্য শাসক। এছাড়া ব্রেক্সিটের পর সৌদি আরবের সঙ্গে বৃটেনের সমপর্ক অন্য মাত্রা পেতে যাচ্ছে। আরো কয়েকটি কারণও রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তাগত কারণে বৃটেনের গভীর সমপর্ক রয়েছে। বৃটেনে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে গোপন তথ্য দিয়েছে সৌদি আরব। আবার ইরানের হুমকি মোকাবিলায় সাইবার বিশেষজ্ঞের সহায়তা চাইছে সৌদিরা।
সৌদির কাছে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ডের অস্ত্রও বিক্রি করতে চাইছে বৃটেন। মন্ত্রীদের ভাষ্য- এই অস্ত্র বিক্রির ওপর হাজার হাজার বৃটিশের চাকরি টিকে রয়েছে বলে মন্ত্রীরা মন্তব্য করেছেন। কিন্তু সৌদি যুবরাজের এই সফর হয়তো এরচেয়েও বেশি কিছু। সৌদি আরবে যে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, সেই সংস্কারের দিকে তিনি আন্তর্জাতিক সমর্থনও আদায় করতে চাইছেন। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করাও তার অন্যতম উদ্দেশ্য। ২০৩০ সালের মধ্যে তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বাজার নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাইছেন সৌদি যুবরাজ। আর এখানেই বৃটিশ ব্যবসায়ীদের অনেক সুযোগ রয়ে গেছে। শিক্ষা, বিনোদন, পর্যটন, স্বাস্থ্য- সব খাতেই বৃটিশদের দক্ষতা রয়েছে, যা তাদের দেশটিতেও নতুন বাজারে অনেকটা এগিয়ে রাখবে। আবার সৌদি আরব থেকেও বিনিয়োগ পেতে চায় যুক্তরাজ্য। বিশেষ করে সৌদি রাষ্ট্রীয় তেল কোমপানি, আরামকোকে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে পেতে চাইছে বৃটিশরা। অন্য কথায় বলতে গেলে, ব্রেক্সিটের পর বৃটেনের নতুন বন্ধু, নতুন বাজার আর অর্থের যোগান দরকার হবে। আর এসবের জন্য সৌদিরা বৃটেনের তালিকার একেবারে উপরের সারিতেই রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.