সাফল্যের রহস্য জানালেন মাশরাফি

টেস্টে দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ রফিক দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। কিন্তু তাদের পরই ৭৮ উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে ইনজুরি কাটিয়ে ওয়ানডেতে ফিরেছেন। দলকে যেমন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তেমনি ১৮৫ ম্যাচে ২৩৮ উইকেট নিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। শুধু তাই নয়, টি-টোয়েন্টিতে সাকিব ও রাজ্জাকের পর ৪২ উইকেট নিয়ে তার অবস্থান। যদিও ২০০৯ এর পর আর কোনো টেস্ট খেলেননি। আর গেল বছর টি-টোয়েন্টিকে জানিয়েছেন বিদায়। তবে ফিরেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। সেখানেও বল হাতে দারুণ সফল তিনি। মাত্র ৫৬ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৪ উইকেট নিলেও। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২৫০ ম্যাচ খেলে তার শিকার সর্বোচ্চ ৩৫৪ উইকেট। এছাড়া ১৩৬ ঘরোয়া টি- টোয়েন্টি ম্যাচে তার ঝুলিতে জমা পড়েছে ১১৬ শিকার। বয়সটা ৩৫ ছুঁই ছঁই। ঠিক সেই সময় ফের নিজের দিকে কেড়ে নিলেন সকল আলো। মঙ্গলবার লিস্ট এ ক্রিকেটে নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক তুলে নিলেন চার বলে চার উইকেট নেয়ার ইতিহাস রচনা করে। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে সব তরুণ পেসারদের ছাড়িয়ে মাত্র ৮ ম্যাচে তার উইকেট ২৪টি। বাংলাদেশের মতো স্পিন নির্ভর দেশে কিভাবে এ পেসার এতটা সফল? গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে খোলামেলা এক আড্ডায় তুলে ধরেন নিজের সাফল্য রহস্য। জানালেন কী অস্ত্রে তিনি কাবু করেন ব্যাটসম্যানদের। তার কথপোকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
ইমরান খান থেকে অনুপ্রেরণা
ওয়াকার ইউনুসের একটা সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম তিনি ইমরান খানের কাছে গিয়েছিলেন সুইং শিখতে। ও প্রথম অবস্থায় অনেক জোরে বল করতো। তখন ইমরান তাকে অনেক রাগারাগি করে বলেছিলেন  এইটা তোমার কাজ না। তোমাকে আমি টিমে নিয়েছি জোরে বল করার জন্য এবং তোমার যে জায়গা সেখানে বল করতে। একটা পর্যায়ে দেখবা সুইং শিখতে তোমার ইমরানের কাছে আসতে হবে না। আপনা আপনি শিখে গেছো। সেই ওয়াকারই পুরো বিশ্ব শাসন করেছে। আপনি যখন বোলার হিসেবে আসবেন প্রথমেই আপনাকে স্পট ঠিক করতে হবে। বাকি ব্যাপারগুলো আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে।
ছোট বেলা থেকেই স্পট বোলিং
আমি যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করি তখন আমি সবসময় জায়গায় বল করতে চাইতাম, পেস ওরকম ছিল না। এটাই এখনো আমার সঙ্গী। আমার স্ট্রেংথ বলতে যদি কিছু বলেন একটাই-আমি একটা জায়গায় বল করতে চাই। একটা জায়গার বাইরে আমি কিছু করতে চাই না। যদি ভেরিয়েশন কিছু করি সেটাও ওই জায়গার ভেতরে। এরপর ভালো খারাপ অন্য জিনিস। কিন্তু একজন বোলারের জন্য জায়গাটা স্থির রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
কাটার শেখা
কাটার আমি ২০০৫ থেকে শিখেছি এবং তখন থেকেই ওটা আমার স্ট্রেংথ। ইমপ্রোভাইস করা শিখেছি যখন আমি দেখেছি আমার জায়গা ঠিক আছে। যখন ইনজুরি আসছে তখন আবার ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়েছে।
চার বলে চার উইকেট
এটা বিশ্বে কেবল অষ্টম ঘটনা- শোনার পরে অবশ্যই ভালো লেগেছে। যে কোনো ম্যাচই খেলেন আপনি যদি ৫ উইকেট পান, তিন উইকেট পান ওই অনুভূতি অবশ্যই অন্যরকম। কিন্তু আলাদা করে বলার মতো কিছু না। তবে একটা ভয় বারবারই লাগছিলো ম্যাচ হেরে যাচ্ছিলাম। আর পরপর দুই ম্যাচ হারলে পিছিয়ে যেতাম। যে কোয়ালিটির টিম আবাহনী তাতে হারলে খারাপ হতো। তো ওই অনুভূতিটা বেশি ভালো ছিল যে হারের জায়গা থেকেও ম্যাচটা জিততে পেরেছি।
তরুণদের জন্য বার্তা
দেখেন আমি কাউকে বার্তা দিতে চাই না। যতই সিনিয়র হই আমি কিন্তু নিজেও একজন খেলোয়াড় এবং আমার ফিটনেস ঠিক রাখা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং ভালো খেলার ব্যাপার আছে। তো আমি অধিনায়কত্বের বাইরেও এই জায়গাগুলো ঠিক রাখি। বার্তা দেয়ার কিছু নেই। আপনি যদি আমার কাছ থেকে কিছু শিখতে চান সেটা আপনার ব্যাপার। আমি কোচ নই। এরপরেও যদি কেউ আমার কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা চায় আমি রেডি আছি।

No comments

Powered by Blogger.