খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে ৮ নেতার সাক্ষাৎ: উস্কানিতে পা না দেয়ার পরামর্শ

দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেইসঙ্গে কোনো ধরনের উস্কানিতে পা না দেয়ার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। গতকাল বিকালে কারাবন্দি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের সোয়া ঘণ্টা সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। বিকাল সোয়া তিনটার সময় আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুুযোগ পেয়েছি। দেশনেত্রীর মনোবল অত্যন্ত উঁচু। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিকূল পরিবেশকে মোকাবিলা করছেন। কারারুদ্ধ অবস্থায়ও তিনি দেশের জন্যই চিন্তা করছেন। মির্জা আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া জানিয়েছেন- আপনাদের মাধ্যমে (গণমাধ্যম) দেশবাসীকে জানানোর জন্য, তিনি সুস্থ আছেন। তিনি ভালো আছেন। তিনি দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা তার সঙ্গে আলোচনা করে এতটুকু বুঝতে পেরেছি, তার মনোবল অত্যন্ত উঁচু আছে। সত্যের পথে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি মনে করেন। আমরাও মনে করি সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। বেআইনিভাবে সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি মামলা দিয়ে তাকে আজকে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সরকার বিভিন্ন কারচুপির মধ্যদিয়ে, বিভিন্ন ছলচাতুরি করে তার কারাবাসকে দীর্ঘ করার চেষ্টা করছে। এর সবকিছুই দূরীভূত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মির্জা আলমগীর বলেন, আইনি লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যে রাজনৈতিক সংগ্রাম, সে সংগ্রামও চলছে খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য। কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন কেমন আছেন- এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, তিনি ভালো আছেন। নেতাদের প্রতি কোনো নির্দেশনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, আপনারা জানেন যে- চেয়ারপারসন কারান্তরীণ হওয়ার পর থেকে আমরা একটি যৌথ নেতৃত্বে আমাদের দল পরিচালনা করছি। আন্দোলন পরিচালনা করছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যিনি রয়েছেন তার সঙ্গে পরামর্শ করেই আমরা সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি। বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধার বিষয়টি চেয়ারপারসনকে অবহিত করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসকল কিছুই হচ্ছে উস্কানি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তিপূর্ণ করার জন্য পাঁয়তারা করছে। দেশনেত্রী কারও উস্কানিতে পা না দিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাওয়ার জন্য আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কারাগারেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মানসিকভাবে শক্ত আছেন। তবে কারাগারের পরিবেশ ভালো নয়। পুরনো ভবন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তার একাকিত্ব। এছাড়া তার ডান হাতে সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য বাইরের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে তার চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। আমির খসরু বলেন, কারাগারে সাধারণ খাবারই খাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দল পরিচালনায় খালেদা জিয়ার নির্দেশনার ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, দলকে সুশৃঙ্খলভাবে গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক পথে পরিচালনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাই আমাদের এ পথেই চলতে হবে। গণতন্ত্রের পথে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। কোনোভাবেই বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা ব্যাহত হোক তা চান না চেয়ারপারসন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথযাত্রা অব্যাহত রাখার পক্ষে, নিয়মতান্ত্রিক পথ চলার বিষয়টি তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এর আগে বিকালে তিনটায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি নেতারা পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। সেখানে কিছুক্ষণ তারা জেল সুপারের কক্ষে অপেক্ষা করেন। পরে নেতারা এক সঙ্গে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। দীর্ঘ এক ঘণ্টার বেশি সময় তারা চেয়ারপারসনের সঙ্গে কুশলবিনিময়সহ দল ও রাজনীতির সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করেন। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে নেতারা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারী নেতারা হলেন- মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার। তবে অসুস্থতার কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় নজরুল ইসলাম খান টিমের তালিকাভুক্ত থাকলেও সাক্ষাৎ করতে কারাগারে যেতে পারেননি। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১০টার পর বিএনপির পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হয় দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির ৮ সদস্যসহ ১০ জনের একটি টিম বুধবার বিকালে কারাবন্দি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পেয়েছেন। কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এক সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দেখা দিয়েছেন নানা কৌতূহল। কিন্তু চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের বাইরে মুখ খোলেননি অন্য কোনো নেতা।

No comments

Powered by Blogger.