সুচির পদক প্রত্যাহার করে নিল হলোকাস্ট মিউজিয়াম

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বর সামরিক অভিযান বন্ধে নৈতিকভাবে নিজের কর্তৃত্ব ব্যবহার না করায় যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মিউজিয়াম মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিকে দেয়া মানবাধিকার পুরস্কার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের নির্যাতনের শিকারদের স্মরণে ওয়াশিংটনে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বুধবার তারা জানিয়েছে, এটা খুবই অনুতাপের যে আমরা এখন তাকে দেয়া এই পদক প্রত্যাহার করে নিয়েছি। সিদ্ধান্তটি নেয়া আমাদের জন্য ছিল অনেক কঠিন কাজ।-খবর গার্ডিয়ান অনলাইন ও রয়টার্সের। ২০১২ সালে সুচিকে ইলি উইসেল নামের এই মানবাধিকার পদক দেয়া হয়েছিল। নোবেলজয়ী উইসেল ছিলেন জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। নাৎসিদের নির্যাতন থেকে বেঁচে যাওয়া উইসেলকেই প্রথম এই পদক দেওয়া হয়েছিল। দেশের সামরিক শাসনের বিরোধীতা করায় ১৫ বছর গৃহবন্দী থাকতে হয়েছিল সুচিকে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার অবদানের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তাকে তুলনা করা হতো। ১৯৯১ সালে তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। মিয়ানমারের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে তার দল ব্যাপক বিজয় অর্জন করলে তিনি দেশটির স্টেট কাউন্সিল হন। পদ স্টেট কিউন্সিলর হলেও তিনিই মূলত সরকার প্রধান।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দেশটির নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিয়ানমারে সফর করেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা শুরু হলে সুচির আন্তর্জাতিক সুনাম প্রশ্নের মুখে পড়ে ও নির্মূল অভিযানের একজন সমর্থক হিসেবে তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি কখনও প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি। হলোকাস্ট মিউজিয়ামের পরিচালক সারা ব্লুমফিল্ড বলেন, সুচির পদক প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমার দূতাবাসে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। যেটি জাদুঘরের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মূল অভিযান শুরু হলে শান্তিতে নোবেলজয়ী সুচির পদক প্রত্যাহার হয়েছে বেশ কয়েকটি। তাকে দেয়া ফ্রিডম অফ দি সিটি অব অক্সফোর্ড অ্যাওয়ার্ড, ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব ডাবলিন প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাজ্যের এই দুই শহর কর্তৃপক্ষ। এক যুগ আগে সুচিকে দেয়া সম্মাননা স্থগিত করে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন- ইউনিসন। জাদুঘরের চিঠিতে বলা হয়েছে, সুচি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণে মদদ দিয়েছে এবং যেসব জায়গায় নির্যাতন সংঘটিত হয়েছে, সেখানে সাংবাদিকদের যেতে দেয়নি। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের বিষয়ে মিয়ানমারের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ব্লুমফিল্ড বলেন, রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও তাতে সুচির ভূমিকা জাদুঘর কর্তৃপক্ষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। সরাসরি তথ্যপ্রমাণ যোগাড় করতে তিনি বেশ কয়েকবার মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেছেন। গণহত্যার বিপুল তথ্যপ্রমাণও প্রকাশ করেছে জাদুঘর কৃর্তপক্ষ। গেল বছরের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ নাগরিকরা রাখাইন রাজ্যের কয়েক হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। তাদের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.