সিলেটে জোড়াখুনে যত ক্ষোভ আলফুর বিরুদ্ধে by ওয়েছ খছরু

বরইকান্দিতে জোড়া খুনের ঘটনার পর ফের আলোচনায় কোম্পানীগঞ্জের আলফু চেয়ারম্যান। এর আগে কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত আবদুল আলী হত্যা মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কয়েক মাস কারাগারেও ছিলেন। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আলফু চেয়ারম্যানের লোকজনের হাতে খুন হলেন সিলেটের বরইকান্দি আওয়ামী লীগের দুই কর্মী। আলফু চেয়ারম্যানের মূল বাড়ি সিলেট শহরতলি বরইকান্দিতে। আলফু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষোভের অন্ত নেই দক্ষিণ সুরমায়। তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। জোড়াখুনের ঘটনায় হতবাক সবাই। এলাকায় সংঘর্ষ হয়, মানুষ আহতও হয়। কিন্তু এভাবে গুলি করে কেউ কাউকে খুন করে না। অস্ত্রের ঝনঝনানি বরইকান্দিতে আগেও ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনার মতো না। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন- আব্দুল লতিফ আলফু চেয়ারম্যান কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সোমবারের ঘটনার সময় বরইকান্দি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গৌছ মিয়ার লোকজন তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ঘটনার পর আলফু চেয়ারম্যান ও লোকজন ক্ষুব্ধ হয়। রাতে লোকবল কম থাকায় তারা পাল্টা জবাব দিতে পারেনি। সকালের দিকে আলফু চেয়ারম্যান তার নির্বাচনী এলাকায় কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল থেকে মানুষ নিয়ে আসেন। তারা গাড়ি করে বরইকান্দি গ্রামে আলফুর বাড়িতে আসে। কোম্পানীগঞ্জ থেকেই নিয়ে আসা হয় আগ্নেয়াস্ত্র। আর সকালের দিকে গৌছের বাড়িতে তারা হামলা করতে বের হয়। পথিমধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করা হয়। গুলিতে মারা যান সিলেট সদর শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মাসুক মিয়া ও যুবলীগ কর্মী বাবুল মিয়া। তারা আবার আওয়ামী লীগ নেতা গৌছ মিয়ার ভাগিনা। তারা গৌছের বাড়িতেই বসবাস করতো। ঘটনার পর সংঘর্ষ হলেও আলফু চেয়ারম্যানের লোকজন বেশি আহত হয়নি। এ ঘটনার পর থমথমে এলাকা। গতকাল লাশ দাফন করা হয়। পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় নেই আলফু সহ তার লোকজন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালালেও কাউকে পায়নি। গতকাল বিকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল জানিয়েছেন- আলফু চেয়ারম্যান ও লোকজনকে পুলিশ খুঁজছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে- বরইকান্দি হচ্ছে সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরঘেঁষা এলাকা। ১০টি গলির বিশাল এলাকা। একেক গলি একেকটি গ্রামের মতো। এই গ্রামের গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব রয়েছে। কিন্তু ওই দ্বন্দ্ব কখনো বড় আকার ধারণ করেনি। আগে থেকেই এলাকায় গৌছ মিয়া ও আলফু চেয়ারম্যানের লোকজনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল। এ লড়াইয়ের মূল কারণ আধিপত্য। আলফু চেয়ারম্যানও আওয়ামী লীগ ঘরানার মানুষ। সিলেট আওয়ামী লীগের ভেতরে রয়েছে তার আধিপত্য। আর গৌছ মিয়া সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কোম্পানীগঞ্জের তেলিখালের চেয়ারম্যান হলেও আলফু সম্প্রতি নিজ এলাকা বরইকান্দিতে প্রভাব রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ থেকে গৌছ মিয়ার সঙ্গে তার ভেতরে ভেতরে লড়াই চলছিল। সোমবার রাতে যখন সংঘর্ষ হয় তখন সেটি দেখা দেয় প্রেস্টিজ ইস্যুতে। এ কারণে কোম্পানীগঞ্জ থেকে আলফু চেয়ারম্যান লোকজন এনে এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। বিষয়টিকে ভালোভাবে নিচ্ছে না এলাকার মানুষ। বাইরের লোকজন এলাকায় এনে দুইজনকে খুন করার ঘটনায় তাদের ভেতরে ক্ষোভ বাড়ছে।

No comments

Powered by Blogger.