নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে অভিনব প্র্রযুক্তি

পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক বা রেলের তুলনায় নৌপথ অনেক বেশি উপযুক্ত, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জার্মানির বিশাল জলপথ নেটওয়ার্কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা এড়াতে কাজে লাগানো হচ্ছে এক অভিনব প্রযুক্তি। রাইন নদীর তীরে লোরেলাই টিলা। কিংবদন্তি অনুযায়ী জায়গাটা বড় বিপজ্জনক। অতীতে সেখানেই নাকি অনেক জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালে সেই কিংবদন্তি সত্যি ফলে গিয়েছিল। এক রাডারের পর্দায় সেই ঘটনা ধরা প্রড়ে। ভোর ৪টা ৪২ মিনিটে ভালডর্ফ নামের বিশাল এক ট্যাংকার জাহাজ রাডার থেকে উধাও হয়ে যায়। জাহাজে ২০০০ টন সালফিউরিক অ্যাসিড ছিল। সে যাত্রায় ক্যাপ্টেনের মৃত্যু হয়। এমন বিশাল দুর্ঘটনার কারণে জার্মানির পরিবহন মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের এক কমিটি গঠন করে তদন্তের ভার দেয়। জাহাজ চলাচলের এক নতুন সিমুলেটর সেই দুর্ঘটনার রহস্য সমাধান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফেডারেল নৌপথ ইঞ্জিনিয়ারিং ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা বিএডব্লিউ সেটি তৈরি করেছে। এটি কোনো ভিডিও গেম নয়, বরং একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র। গবেষক টর্স্টেন ডেটমান এ বিষয়ে বলেন, প্রথম দর্শনে ভিডিও গেম মনে হলেও আমরা অনেক পরিশ্রম করে প্রকৃতি ও জাহাজের বৈশিষ্ট্য নকল করে এমন সিমুলেশন সৃষ্টি করেছি, যা নদীর উপর বাস্তব পরিস্থিতির হুবহু প্রতিফলন ঘটায়। সিমুলেটরের পর্দায় নজর দিলে সত্যি সবকিছু খুব বাস্তব মনে হয়।
এমনকি ক্যাপ্টেনের দাঁড়ানোর জায়গায় দিক নির্ণয়সহ বিভিন্ন কাজের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেগুলোও হুবহু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আবহাওয়া অনুযায়ী চারিদিক স্পষ্ট অথবা ঝাপসা থাকে। টর্স্টেন ডেটমান বলেন, সিমুলেটরে আমরা এ দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি। আমরাই তথ্য সংগ্রহ করছি, যার কিছুটা সবার নাগালেই রয়েছে। কিছু তথ্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপ কেন্দ্র থেকে পাই। তাছাড়া মানুষই যেহেতু সিমুলেটরটি চালায়, অনেক কিছুই তার নজরে পড়ে। সে কারণে আমাদের ভিসিবিলিটি সিস্টেমের প্রয়োজন, যদিও তার ফলে কাজ অনেক বেড়ে যায়। আকাশ থেকে স্ক্যান করে জার্মানির নৌপথের থ্রিডি মডেল তৈরি করা হয়েছে। তবে রাডার প্রতিফলনের মাধ্যমে নদীর তলদেশের পরিমাপ তার থেকেও বেশি জরুরি। কারণ তলদেশের কাঠামো জটিল স্রোত সৃষ্টি করে, যা জাহাজ চলাচলের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলে। নিউমারিক মডেলের মাধ্যমে নদীর তীর পর্যন্ত পানির স্রোতের গতি-প্রকৃতি হিসাব করা হয়। তাছাড়া জাহাজের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও গোটা প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে। প্রত্যেকটি জাহাজই সেই অর্থে ভিন্ন এবং নদীর স্রোতের সঙ্গে তার ঘাত-প্রতিঘাত আলাদা। তাই আলাদা করে সব জাহাজের আচরণ আগেই পরিমাপ করা হয়। টর্স্টেন ডেটমান বলেন, আমরা সাধারণত সেই ক্যাপ্টেনকে নিয়ে আসি, যিনি সাধারণত জাহাজ চালান। তিনি আমাদের সিমুলেটরে জাহাজের ভার্চুয়াল মডেলটি চালিয়ে বলেন, তিনি এখানে অবিকল আসল জাহাজ চালানোর স্বাদ পাচ্ছেন। একমাত্র তখনই কোনো জাহাজ আমাদের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান প্রায়। তারপর সেটিকে আমরা পরীক্ষার কাজে লাগাই। ভালডর্ফ জাহাজের ক্ষেত্রে সিমুলেটরের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়, যে স্রোত, পানির উচ্চতা অথবা অন্য কোনো জাহাজ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল না। ডয়চে ভেলে।

No comments

Powered by Blogger.