রোগী ও স্বজনদের পদে পদে হয়রানি

রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, বিনা মূলে৵র ওষুধ না দেওয়া, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পছন্দমতো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বেশি দামে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করা, পদে পদে আয়া-সেবিকাদের টাকা দাবিসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বিরুদ্ধে ৯৪টি অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের সেবা ও সুবিধাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যার নিষ্পত্তি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আয়োজিত গণশুনানিতে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি এ শুনানির আয়োজন করে। গত রোববার নগরের আগ্রাবাদে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিজয় হলে অনুষ্ঠিত শুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার নাসিরউদ্দীন আহমেদ। শুনানিতে ২৫ ভুক্তভোগী বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্যে দুদক কমিশনার বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা গণশুনানি করছি। যাতে সমস্যাগুলো সমাধান করে কীভাবে চিকিৎসার মান বাড়ানো যায় সে পথে যেতে পারি।’ দীপন বড়ুয়া নামের এক ভুক্তভোগী শুনানিতে বলেন, তাঁর এক আত্মীয় গাছ থেকে পড়ে আহত হয়েছিলেন। তাঁকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর দুই দফায় এক কর্মচারীকে ৭০০ টাকা দিতে হয়েছে। পরে আরও ১ হাজার ১০০ টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে ড্রেসিং করাতেন না। বাধ্য হয়ে রোগীকে বাঁচাতে টাকা দিতে হয় রোগীর স্বজনদের। হাসপাতালের বয়, সেবিকাদের টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না বলে জানান নাসির উদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তি। পারভীন আক্তার নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গেলে কর্মচারীরা নানা অজুহাত ও ঝামেলা দেখান। বাধ্য হয়ে তাঁদের কথামতো বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে হয়। এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা পান না-বলে অভিযোগ করেন জিল্লুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। এ ছাড়া নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের সেবায় দীর্ঘসূত্রতা,
ওষুধ কোম্পানির লোকজনের চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের মোবাইলে ছবি তোলার হিড়িক, ব্যবস্থাপত্রের লেখা বুঝতে না পারারও অভিযোগ ওঠে শুনানিতে। ৯৪টি অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক আকতার হোসেন বলেন, দুদক অভিযোগগুলো অনুসন্ধান শুরু করেছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুনানিতে অভিযোগগুলো উঠে আসার পর চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩টি। অথচ প্রতিদিন আড়াই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩ হলেও জনবল এখনো সাড়ে ৫০০। এই জনবল দিয়ে আড়াই হাজার রোগীর সেবা দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ। নিয়োগ বন্ধ থাকায় নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য-সংখ্যক কর্মচারী কাজ করছে। তারাই হয়তো এ কাজে জড়িত। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুনানি শেষে নাসিরউদ্দীন আহমেদ হাসপাতাল প্রশাসনকে বলেন, চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীরা যেন ইউনিফর্ম পরেন। অভিযোগকেন্দ্র স্থাপন করা হোক। সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন গণশুনানির আয়োজন করার কথাও বলেন তিনি। গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি মুজিবুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, ক্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.