চালের দাম ও মজুত নিয়ে শঙ্কা

চালের দাম একটা দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে আছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও চাল ও খাদ্য মজুতের যে চিত্র, তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বা চালের দাম কমানোর ব্যাপারে কোনোভাবেই আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। চালের দাম বাড়ার এই প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, গত কয়েক মাসে চালের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় দেশের পাঁচ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। অর্থমন্ত্রী অবশ্য সানেমের প্রতিবেদনের এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেন না। তবে চালের দাম বাড়ার কারণে কিছু লোকের যে ‘অসুবিধা’ হচ্ছে, তা তিনি মেনে নিয়েছেন। চালের দাম বাড়ার কারণে ঠিক কত লোক গরিব হয়েছে, সেই সংখ্যা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু মোটা চালও যখন ৪৪ থেকে ৪৬ টাকার নিচে পাওয়া না যায়, তখন সেই চাপ যে অনেকের কাছেই অসহনীয়, তা মানতেই হবে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়তির দিকে, ফলে আমদানি ব্যয় বাড়তে পারে। অন্যদিকে সরকারের খাদ্য মজুত পরিস্থিতি স্পষ্টতই শোচনীয়। ফলে বাজারের ওপর প্রভাব ফেলার মতো কার্যকর অস্ত্র সরকারের হাতে নেই। অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিতে পারেন এবং তাঁরা বেশি মুনাফার আশায় নানা কৌশল নেওয়া শুরু করলে চালের দাম বেড়ে যাবে। সরকারের খাদ্য মজুতের ক্ষমতা রয়েছে ১৭ লাখ মেট্রিক টনের মতো। অথচ সরকারের কাছে বর্তমানে মজুত আছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল ও আড়াই লাখ টন গম।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সরকারের মজুত ১০ লাখ টনের নিচে নেমে গেলেই সরকার বাজারের ওপর অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হারায় আর ৬ লাখ টনের নিচে নেমে গেলে বাজার নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতাই হারায়। সরকারের খাদ্য মজুত বিবেচনায় নিলে পরিস্থিতিকে শোচনীয় বলেই মানতে হচ্ছে। চালের দাম কমাতে সরকারের তরফে বেশ কিছু নীতিগত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমদানি শুল্ক কমানো থেকে শুরু করে বেসরকারি খাতে আমদানির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি মজুত বাড়াতে খাদ্য সংগ্রহে খাদ্য মন্ত্রণালয় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এটা পরিষ্কার যে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তদারকি জরুরি হয়ে পড়েছে। মজুত, সরবরাহ ও আমদানি—এই তিনটি দিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি জরুরি। দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চালের ধারাবাহিক দাম বাড়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবগুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা মানুষ দরিদ্র হবে, আর নিচে থাকা মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে। এতে দারিদ্র্য দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেবে, দেশ পড়বে অপুষ্টির চক্রে। বর্তমান বাস্তবতায় এখনই যে দিকটিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, তা হচ্ছে সরকারের খাদ্য মজুত বাড়ানো। আমরা আশা করি, সরকার এদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে।

No comments

Powered by Blogger.