হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেড়শ’ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় স্থাপিত শিল্পের উৎপাদন নির্বিঘ্ন করতে চায় সরকার। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য স্থাপন করা হচ্ছে দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক ১৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি তৈরিতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯০৭ কোটি ৮৬ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ‘মিরসরাই ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটি আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় বি-আর পাওয়ার জেন লিমিটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত বিভিন্ন ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় কমানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে ডুয়েল-ফুয়েলের মাধ্যমে পাঁচ বছরে ৯৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০১৯ সালের জুনের মধ্যে ডুয়েল-ফুয়েলের মাধ্যমে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার এ লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে পণ্য সহজেই সড়ক ও সমুদ্র উত্তর পথে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করতে পারবেন। এ বিবেচনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি প্রায় ২ হাজার ৯১১ দশমিক ৮৩ হেক্টর জমি নিয়ে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করার পরিকল্পনা করা হয়। এরই মধ্যে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক তৈরি কারখানা, কটন মিল, মোটরসাইকেল সংযোজন কারখানা, খাদ্য ও পানীয়জাতীয় বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা নির্মাণের জন্য বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা শিল্পকারখানা নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) দফতরের সঙ্গে কাজ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। বেজার তৈরি করা সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪০ মেগাওয়াট, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার কথা বলা হয়েছে। তাই মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ পরিপূর্ণভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে শুরু করার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে ওঠা শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও বি-আর পাওয়ার জেন লিমিটেড যৌথভাবে মিরসরাইয়ে আগামী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি ১৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চলতি (২০১৭-১৮) অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত নেই। তাই এটি একনেকে অনুমোদনের প্রক্রিয়াকরণ শুরুর আগেই পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছ থেকে পূর্বানুমোদন নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ৫ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অন্যান্য খাতের ভাতার আওতায় অতিরিক্ত সুবিধাসহ সব ভাতাদি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া একটি সিঙ্গেল ক্যাব পিক আপ এবং এ সংশ্লিষ্ট ব্যয় বাদ দেয়ার কথা বলা হয়।

No comments

Powered by Blogger.