রাঙ্গাবালীর তরমুজ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে

উপযোগী মাটি, সঠিক পরিচর্যা আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পটুয়াখালী জেলার কয়েকটি উপজেলায় তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। বিশেষ করে রাঙ্গাবালী উপজেলাতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তরমুজ চাষিরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে বাজারজাত করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন পটুয়াখালীর চরাঞ্চল রাঙ্গাবালীসহ একাধিক উপজেলা থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে এখনও ক্ষেত থেকে পুরোদমে তরমুজ সংগ্রহ শুরু করেননি কৃষকরা। রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবিশস্য মৌসুমে অন্যান্য রবিশস্যের পাশাপাশি রাঙ্গাবালী উপজেলায় এ বছর ১১২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন তরমুজ চাষীরা। এরমধ্য রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর, বড়বাইশদিয়া, ছোটবাইশদিয়া, চরমোন্তাজ, চালিতাবুনিয়া, কাছিয়বুনিয়া, কাউখালীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। তবে মার্চের প্রথম দিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে তরমুজ চাষীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা না হলে এ বছর তরমুজ ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেত বলে দাবী করেন কৃষকরা। তবে বিপর্যয়ের ফলে চাষিরা এবছর দাম ভালো পাচ্ছেন বলে জানান আড়ৎ মালিকরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন ঢাকাগামী লঞ্চ, ট্রলার, এবং ট্রাক যোগে রাঙ্গাবালী উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, ঝিনাইদাহ, সিলেট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ সরবরাহ করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পাড় করে তরমুজ চাষীরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে স্থানীয় আড়তদার এবং সৃজনশীল ব্যবসায়ীরা। রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালী গ্রামের রাহেলা বেগম জানান, তিনি এ বছর ২ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ৪০ হাজার টাকা। তিনি তিন ধাপে এপর্যন্ত আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। তবে মার্চ মাসের বৃষ্টিপাতের কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তা না হলে আরো ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ তরমুজ তার ক্ষেত থেকে উৎপাদন করা সম্ভব হতো।
কিন্তু এবছর দাম ভাল পাচ্ছেন বলে জানা তিনি। রাঙ্গাবালী উপজেলা যুগীর হাওলা গ্রামের তরমুজ চাষী আবু হানিফ জানান, এবছর তিনি ৬০ হাজার টাকা ব্যায়ে ৪ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে বৃষ্টিতে ১ একর জমির তরমুজ বৃষ্টিতে বিনষ্ট হয়ে যায়। তিনি এ পর্যন্ত ৩ ধাপে সাড়ে তিন লাখ টাকার তরমুজ সরবরাহ করেছেন। সে ক্ষেত্রে তার এ বছর তরমুজ চাষ থেকে তিন লাখ টাকা লাভ হয়েছে। তবে তিনি জানান, কৃষি দফতর যদি তাদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতেন তাহলে ফলন আরো ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। উপজেলার গাব্বুনিয়া গ্রামের দুদা মুন্সি জানান, তার ছোট ভাই ইমাম মুন্সি এবং তিনি মিলে ৯ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছন। এতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তারা দুই ভাই এ পর্যন্ত স্থানীয় আড়তদারের কাছে ৪ ধাপে অন্তত ১২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। চালিতা বুনিয়ার নাসির সিকদার জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর তার ক্ষেতে ফলন ভালো হয়েছে। এবছর আমি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে ৪ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করে এ পর্যন্ত ২ ধাপে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকারও বেশি তরমুজ বিক্রি করেছি। তাতে আমার সব পুশিয়ে অন্তত ৫ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। বৃষ্টিতে ক্ষতি না হলে তিনি তার ক্ষেত থেকে ১০ লাখ টাকার তরমুজ উৎপাদন করতে পারতেন বলে জানান। পটুয়াখালী জেলা শহরের আরত মালিক মো: খায়রুল হাসান জানান ভিন্ন কথা। তিনি জানান, এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু মার্চ মাসের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তরমুজ চাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর কৃষকরা দাম ভালো পাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.