ভাস্কর্যটি সরাতে বা ঢেকে দেয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যটি সরাতে বা ঢেকে দেয়ার জন্য প্রধান বিচারপতিকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রধান বিচারপতিকে বলেছেন, ভাস্কর্যটি দর্শনীয় হয়নি। গ্রিক দেবীকে শাড়ি পরানো হয়েছে। এটি নিয়ে বিতর্কও উঠেছে। এটি হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে ফেলুন অথবা এমনভাবে ঢেকে দিন যাতে জাতীয় ঈদগাহ থেকে দেখা না যায়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ তথ্য জানান। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক মন্ত্রী যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সোমবারের বৈঠকে ‘রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৭’, ‘আয়কর আইন-২০১৭’ এবং ‘পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৭’-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর একটি ‘রেপ্লিকা’ হস্তান্তর করা হয়।সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার বৈঠকের নির্ধারিত আলোচনা শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু শনিবার বিচারপতিদের বাসভবন উদ্বোধন করতে গিয়ে বিচার বিভাগসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। চুন্নু বলেন, সেদিন প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগ প্রশ্নে যা বলেছেন, তা যথাযথ এবং যুগোপযোগী। উপস্থিত অন্যান্য মন্ত্রীরাও তাতে সায় দেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এ ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে। ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য বানালেও সেটিকে আবার শাড়ি পরানো হয়েছে। গ্রিক দেবী কি শাড়ি পরত নাকি? আর এটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে জাতীয় ঈদগাহ থেকেও চোখে পড়ে।
এটি দর্শনীয় কোনো ভাস্কর্যও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তিনি শনিবার বিচারপতিদের বাসভবন উদ্বোধনের পর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এ বিষয়ে একান্তে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, ভাস্কর্যটি দর্শনীয় হয়নি। গ্রিক দেবীকে শাড়ি পরানো হয়েছে। এটি নিয়ে বিতর্কও উঠেছে। এটি হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে ফেলুন অথবা এমনভাবে রিপ্লেস (স্থানান্তর) করুন বা ঢেকে দিন যাতে জাতীয় ঈদগাহ থেকে দেখা না যায়। তিনি (প্রধান বিচারপতি) বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) আওতাধীন এলাকার উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা করতে যাচ্ছে সরকার। ওই মহাপরিকল্পনা না মেনে ভূমি ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। এমন বিধান রেখে ‘রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৭’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর আগে গত বছরের ২০ জুন এ আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, এক্ষেত্রে আগের আইনে শুধু ৫ হাজার টাকা জরিমানা ছিল। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আইন প্রসঙ্গে শফিউল আলম বলেন, ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত হচ্ছে। নতুন আইনে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। মূলত ইংরেজি থেকে বাংলা করতে নতুন আইনটি নিয়ে আসা হয়েছে। আয়কর আইন প্রসঙ্গে শফিউল আলম বলেন, ‘আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪’-এর বিধানাবলী ‘আয়কর আইন-২০১৭’ হিসেবে পাস করার প্রস্তাবও নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অধ্যাদেশটি সামরিক শাসনামলে পড়ে গেছে, এটা পরিবর্তন করার আবশ্যকতা রয়েছে। ১৯৮৪ থেকে অধ্যাদেশের যত সংশোধন হয়েছে সবগুলোকে একত্রিত করে একটা সমন্বিত আইন করা হয়েছে। সময় না থাকায় এটা আপাতত ইংরেজিতে করা হয়েছে, পরে বাংলায় নতুনভাবে করা হবে। নতুন আইনে কোনো পরিবর্তন হয়নি। মুজিবনগর দিবসে জাতিকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। আজকের এ দিনে প্রথম বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। সেজন্য মন্ত্রিসভা সবাইকে অভিনন্দন জানায় এবং ওই সময়ে যারা নেতৃস্থানীয় ছিলেন যেমন মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ সবাইকে স্মরণ করা হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর একটি ‘রেপ্লিকা’ হস্তান্তর করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, স্যাটেলাইট-১ নভেম্বর বা ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণ করা হতে পারে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে এ স্লট। এখানেই উড়বে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। উৎক্ষেপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে সরকার। ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে সরকার আশা করছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই)। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি নকশা তৈরি, গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবস্থাপনা, বাজার মূল্যায়ন, স্যাটেলাইট বাজারজাতকরণ এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ করছে। ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব জমিতে দুটি ‘গ্রাউন্ড স্টেশনের’ নির্মাণ কাজ চলছে। অন্যান্য কাজও এগিয়ে যাচ্ছে বলে টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) ‘রিকগনিশন অফ এক্সিলেন্স’ পুরস্কারও পেয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.