বাবর আলী বদলে দিলেন গাঁয়ের কৃষিচিত্র

বয়স ৭৫ পেরিয়ে গেছে। তবুও এই বয়সে ক্লান্তির ছায়া নেই শরীরে। বয়সের বেশিরভাগ সময় কেটেছে তার কাজের মধ্যে দিয়ে। সারাদিন পরিশ্রম করেন, শরীরে এতটুকুও উৎসাহের ঘাটতি নেই। তার বাড়িকে তৈরি করেছেন আদর্শ কৃষিবাড়িতে। তিনি ঘিওর উপজেলার বহুজা গ্রামের আদর্শ কৃষক, সর্বজন শ্রদ্ধেয় মো: বাবর আলী। বাবর আলীর আদর্শ কৃষি বাড়িতে রয়েছে আম, পেঁয়ারা, কদবেল, লিচু, কাঁঠাল, আতা, জামবুরা, নুনাফল, জাম, কলা, বড়ই, পেঁপে, সজনে গাছ, নারিকেল, সুপারি, আমড়া, তাল, আমলকি, অর্জুন, নিম, আদা, হলুদ, পিঁয়াজ, লাল শাক, ডাটা শাক, পুই শাক, পালন শাক, লাউ, কুমড়া, শিম, বটবটি, ধুন্দুল, কচু, করলাসহ অসংখ্য অচাষকৃত উদ্ভিদ, যা তিনি জৈবভাবে উৎপাদন করে আসছেন। তার এ ধরনের কাজকে গতিশীল করতে সহায়তা করে আসছে বেসরকারী কৃষি গবেষণা সংস্থা বারসিক ও ঘিওর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার। বাবর আলীকে বিভিন্ন সময় জৈব কৃষিচর্চার উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ অনুযায়ী কাজ করে তিনি তার নিজ বাড়িকে আদর্শ কৃষি বাড়িতে পরিণত করেছেন। আদর্শ কৃষক মো: বাবর আলী জানান, তার কখনো মৌসুমভিত্তিক ফল, ফলাদি ও সবজির অভাব হয় না। নিজের চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত পণ্য বাজারে বিক্রি করেন। প্রতিবছর তিনি সবজি বাগানে সেক্স থেরোমিন ফাঁদ ঝুলিয়ে দেন, ধুপ দেন, বাসী ছাই দেন, পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে মেহগনি ফলের বালাই ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ভুলেও কখনো রাসায়নিক সার বা কীটনাষক ব্যবহার করেন না।
তার জৈব কৃষি চর্চা দেখে বহুজা গ্রামের নারী-পুরুষদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। গ্রামের নারীরা তার কাছে এসে জৈর সার তৈরির পদ্ধতি শিখে যায়। তার বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। বাবর আলীর স্বপ্ন একদিন যেন বহুজা গ্রামের সবাই জৈব পদ্ধতিতে ফসল ফলায় এবং মানুষকে যেন কৃষি বিষয়ে পরার্মর্শ দিতে পারি। নিজের শেষ জীবনে এসে মানুষের মাঝেই তিনি থাকতে চান। বহুজা গ্রামের কবির হোসেন জানান, ফসলাদী বিভিন্ন পোকার হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি কৃষক বাবর আলীর কাছ থেকে থেরোমিন ফাঁদ দিতে শিখেছেন। এছাড়াও কম্পোস্ট সার তৈরী প্রণালীও তিনি গ্রামের মানুষদের হাতে ধরে শেখাচ্ছেন দীর্ঘদিন যাবত। বাবর আলী বেশ কিছুদিন যাবত নিজ গ্রামে সজনে গাছ রোপণের কথা বলে আসছেন। তিনি মানুষদের বলেন, ‘সজনে গাছ দ্রুত বড় হয় এতে অনেক পুষ্টিগুণ আছে, এই গাছ ঔষুধির কাজও করে।’ সজনে গাছ রোপণের কথা বলতে বলতে এখন তার স্বপ্ন কিছুটা পূরণ হয়েছে। বহুজা গ্রামকে সম্প্রতি সজনে গ্রাম ঘোষণা করেছেন ঢাকা খামার বাড়ির পরিচালক আ: আজিজ। এরপর তার চিন্তা গ্রামে বড়ই গাছ রোপণ করা, তাই এবার তিনি বড়ই এর বীজ রেখেছেন। ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ আশরাফ উজ্জামান বলেন, বাবর আলী একজন অনুকরণীয় আদর্শ কৃষক। তার গ্রামেই শুধু নয়, আশেপাশের অনেক জায়গায় তিনি কৃষি উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন।

No comments

Powered by Blogger.