হাকালুকি হাওরে মরা মাছ আর পচা ধানের দুর্গন্ধে বাতাস ভারি

হাকালুকি হাওরের ধান পচে যাওয়ার ফলে পানি কালো রং ধারণ করেছে। আর পানি নষ্ট হওয়ায় ব্যাপক হারে মরছে মাছ। ধান আর মাছের পচা গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছে হাকালুকির বাতাস। এমন পরিস্থিতিতে হাওর তীরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। হাকালুকি হাওর তীরের বাসিন্দারা জানান, হাওর থেকে যখন বাতাস আসে তখন দুর্গন্ধে যেন নাড়ি ভূড়ি ছিড়ে বমি আসে। মাছ আর ধান পচে একাকার। দুর্গন্ধে এলাকায় বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী জানান, চৈত্র মাসের অকাল বন্যায় ১৮ সহ¯্রাধিক হেক্টর জমির বোরো ধানের পাশাপাশি হাকালুকি হাওরের ছোটবড় ২৩৭টি বিলও তলিয়ে যায়। জলমহালগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাওরময় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ধান রোদে পচন ধরে। এতে পানি দূষিত হয়ে ব্যাপকহারে মাছে মড়ক লেগেছে। হাওরের বিভিন্ন বিলে ইজারাদাররা লাখ লাখ টাকার পোনা মাছ অবমুক্ত করেন। কিন্তু মাছের মড়কে তারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলে জানান। এব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শনকালে হাকালুকি হাওরে প্রচুর মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়। ভেসে উঠা মরা মাছের মধ্যে ছিলো পুটি, টেংরা, ভেদা, বাইলা, বোয়াল মাছ, বোয়াল মাছের পোনা, চান্দা, পাবদা এবং রুই জাতীয় মাছের ছোট পোনা মরে ভেসে উঠছে। তলিয়ে যাওয়া ধান ও পচা মাছের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে হাওর জুড়ে।
হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, হাকালুকি হাওর কেবল এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর নয়, দেশের সর্ববৃহৎ মিঠা পানির মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। এখানে ২-৪ বছরের ব্যবধানে পাহাড়ী ঢলে অকাল বন্যা হয়। কিন্তু এবারের মত চৈত্র মাসে কখনও বন্যা হয়নি। এই অকাল বন্যায় ধানের পচনে মাছেও মড়ক লেগেছে। ফলে মিঠা পানির এই মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটিতে হুমকির মুখে পড়বে। সংকট সৃষ্টি হবে মাছেও। এমনিতে নেই ধান আর সেই সাথে যদি মাছও না থাকে তাহলে হাওর তীরের মানুষের জীবন জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, মাছ মরার কারণ হলো অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া আধাপাকা ধান ও ধানগাছ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করেছে। ধান গাছে এবং ঘাস নিধনের বিষের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব। হঠাৎ পানির পিএইচ কমে যাওয়া। বর্তমান পিএইচ ৫ দশমিক ৮। অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং দ্রবিভূত অক্সিজেন হ্রাস (৫পিপিএম)। এ অবস্থা করণীয় হলো- হাওরে সকল ধরনের ফিশিং বন্ধ করা (জেলেদের প্রণোদনা দিয়ে হলেও), পানির ট্রিটমেন্ট করা (যদিও তা অনেক ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য)। কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, এই অবস্থা এক ধরনের দুর্যোগ। হাকালুকি হাওরের মাছ মরা বন্ধে সাময়িক মাছ ধরা বন্ধে মাইকিং করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাওর সংলগ্ন এলাকায় জনসচেতনতা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.