পিতার অপহরণ মামলা- শিফা হাসপাতালে খালেদ কারাগারে by ওয়েছ খছরু

সিলেটে প্রেমের টানে ঘরছাড়া প্রবাসী বধূ ফারজানা আক্তার শিফা উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার প্রেমিক সিএনজি অটোরিকশাচালক খালেদ আহমদকে। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সিলেটের মোগলাবাজার থানা পুলিশ গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারের পর ফারজানা আক্তার শিফাকে সিলেটে এনে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৯ই জুন বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর প্রথমে সিলেট এরপর ঢাকায় চলে যায় খালেদ ও শিফা। তারা ঢাকার হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করে। এরপর পুলিশি ঝামেলা এড়াতে তারা বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে। এর শুরু হয় শিফা ও খালেদের মোবাইল ট্র্যাকিং। এর সূত্র ধরে বুধবার রাতে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে, গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিএনজি অটোরিকশাচালক খালেদ আহমদ পুলিশকে জানিয়েছে, সে ফারজানা আক্তার শিফাকে ভালবাসে। পালিয়ে যাওয়ার আগে শিফার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। এ কারণে শিফা তার সঙ্গেই পালিয়ে যায়। তবে, শিফার বক্তব্যে বিভ্রান্তি মিলে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কারণ গ্রেপ্তারের পর শিফা এখন স্পষ্ট করে কিছুই বলেনি। আর কিছুটা অসুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেটের মোগলাবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর এসআই স্বপন কান্তি দাশ জানিয়েছেন, আজ-কালের মধ্যে ফারজানা আক্তার শিফা আদালতে তার বক্তব্য দেবেন। তাতেই ঘটনা পরিষ্কার হবে। আর শিফা পালিয়েছে না তাকে অপহরণ করা হয়েছে সেটিও পরিষ্কার হয়নি এখনও। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার সৌদি প্রবাসী মজির উদ্দিনের স্ত্রী দুই সন্তানের জননী ফারজানা আক্তার শিফা ও তার পুত্র শাফিকে গত ৯ই জুন সকাল সাড়ে ৮টায়  মোগলাবাজার আল-ইকমা কিন্ডারগার্টেনে নিয়ে আসেন। সকালে বাড়ি থেকে বের হলেও শিফা দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরেননি। পরে জানা যায়, পুত্র সাফিকে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাচালক প্রেমিক খালেদের সঙ্গে পালিয়েছে শিফা। সিএনজি অটোরিকশাচালকরা জানতেন শিফার ও খালেদের প্রেমের কথা। পালিয়ে যাওয়ার আগে তারা প্রেম, অভিসার সবই করেছে। এদিকে, সন্তানসহ শিফা নিখোঁজের ঘটনায় তার পিতা গোলাপগঞ্জের লক্ষণাবন্দের আবদুল মান্নান বাদী হয়ে ১১ই জুন মোগলাবাজার থানায় অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৭(৬)২০১৫। মামলা দায়েরের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই স্বপন কান্তি দাস অপহৃতদের উদ্ধারে মাঠে নামেন। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে চলে পুলিশের অভিযান। খালেদ মোবাইল ফোন রিসিভ করলেও তিনি কোথায় আছেন সেটি কাউকে অবগত রাখেননি। ফলে পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিং করে করে গাজীপুর গিয়ে পৌঁছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, রাতে নিশ্চিত হওয়া যায় খালেদ অপহৃত শিফাকে নিয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতেই রয়েছে। এবং কোনাবাড়ী ফাড়ি পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয় এবং খালেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে, গ্রেপ্তারের পর খালেদ ও শিফাকে নিয়ে রাতেই সিলেটের পথে রওয়ানা দেয় পুলিশ। সকালে পুলিশ সিলেটে পৌঁছে তাদের আদালতে সোপর্দ করে। আদালত খালেদকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। আর শিফাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোনাবাড়ীর কাশিমপুর কারাগারের গলির ওখানে তাদের পাওয়া যায়। তারা একটি ফাঁকা স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল। ওখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সঙ্গে এ সময় আর কেউ ছিল না বলে জানান তিনি। এলাকা সূত্র জানিয়েছে, স্বামীর অবর্তমানে শিফার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে খালেদ। মান-সম্মানের ভয়ে সন্তান নিয়ে খালেদের সঙ্গে পাড়ি দিয়েছিলেন শিফা। তবে, খালেদের সহকর্মীরা জানিয়েছে, শিফা খালেদকে ভালবাসতো। এ কারণে তারা দুইজনই পালিয়ে যায়। অপহরণের ঘটনা নিছক সাজানো বলে জানান তারা।

No comments

Powered by Blogger.