ফুল- ক্লেমেটিস by সৌরভ মাহমুদ

অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার বাসার টবের লতায় ফুটেছে ক্লেমেটিস
মে মাসের প্রথম সপ্তাহের শুক্রবার মুঠোফোনে কল, শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মা অপর প্রান্ত থেকে বললেন, ‘কাল সকালেই আমার বাসায় চলে আয়। বারান্দার টবে লাগানো লতায় সাদা রঙের ফুল ফুটেছে, তোকে এ ফুলের গল্প বলব।’ কথা শুনে ভাবলাম, ফুলটিকে এর আগে কোথাও দেখিনি হয়তো। হ্যাঁ, ভাবনাটা পরবর্তী সময়ে সঠিকই হলো। পরদিন কিছুটা বৃষ্টিমাখা সকাল। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই পৌঁছালাম তাঁর সিদ্ধেশ্বরীর বাসায়। এরপরই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। বৃষ্টি থামার পর ফুলের দর্শন পেলাম। একজন উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপকের কাছ থেকে হাতে কলমে জ্ঞান অর্জন!
লতানো গাছের প্রতিটি শাখায় সবুজ পাতার সঙ্গে সাদা রঙের ফুলের থোকা। প্রতিটি ফুলে চারটি পাপড়ি এবং অসংখ্য পুংকেশর। ফুল সুগন্ধী, তবে ঘ্রাণের তীব্রতা কম। এই লতা প্রকৃতিতে এর আগে দেখিনি, তবে এই লতার অন্য এক প্রজাতির ফুলের ছবি দেখেছি। সেটি হলো Clematis gouriana, আমাদের দেশে সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় জন্মে।
ফুল দর্শনের পর শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মা জানালেন, কয়েক বছর আগে তিনি ঢাকার উত্তরার এক নার্সারির টবে ফুলভর্তি মোটা একটি লতার গাছ দেখেছিলেন। পরে কেনার জন্য দোকানিকে দাম জিজ্ঞেস করলে তিনি চড়া দাম হাঁকান। অগত্যা সেদিন আর তাঁর লতাটি কেনা হলো না। গত বছর বৃক্ষমেলায় গিয়ে তিনি এ লতার অনেক ছোট চারা দেখতে পান এবং একটি চারা কিনে এনে বাসায় লাগান। এ বছরের গ্রীষ্মে লতায় ফুল ধরে।
এ লতার বৈজ্ঞানিক নাম Clematis flammula। পরিবার Ranunculaceae। ইংরেজি নাম Sweet-scented virgin’s bower। কোনো বাংলা নাম জানা যায়নি। আমাদের দেশে অনেক গাছপালার বাংলা নামকরণ করা হয়নি।
এ লতার ফুল আকর্ষণীয়, সে জন্য ব্যাপকভাবে শোভাবর্ধনকারী হিসেবে লাগানো হয় বাড়ির বাগানে। বাংলাদেশে সম্ভবত সে কারণেই কেউ নিয়ে এসেছেন। আমাদের দেশের নার্সারিমালিকেরা নিজেরাও নানা ফুলের আগমন ঘটিয়েছেন আমাদের দেশে। গত ৬ মে বনানীর ১১ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির দেয়ালে এই ফুলের একটি ঝাড় দেখেছি। আলো-ছায়াময় পরিবেশে এ লতা বেড়ে ওঠে। বছরে একবার পাতা ঝরে এবং একবারই ফুল ধরে। ফুল ফোটে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এবং থাকে বর্ষা অবধি। এ লতার পাতা চকচকে সবুজ এবং ১.৫-২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা। মাচা, বাড়ির দেয়াল কিংবা মাটিতে বেড়ে ওঠে। দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার প্রজাতি। ফুলের সৌন্দর্যের কারণে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বাহারি লতা হিসেবে এটি বাড়ির বাগানে, টবে লাগানো যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.