প্রত্যন্ত দ্বীপে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে ঢাকার প্রস্তাবে উদ্বেগ

বাংলাদেশে নিবন্ধিত প্রায় ৩২ হাজার শরণার্থী রোহিঙ্গাকে প্রত্যন্ত দ্বীপ ঠেঙ্গারচরে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি ঠেঙ্গারচরে গিয়ে সরজমিন একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়, প্রত্যন্ত ঠেঙ্গারচর দ্বীপটি জোয়ারের সময় সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়। এখানে কোন রাস্তাঘাট বা বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারে অবস্থিত শরণার্থী ক্যাম্পগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের এখানে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিয়েছে। গত মাসে বাংলাদেশ জানিয়েছে যে, তারা নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করছে। এর পেছনে আংশিক কারণ হলো বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জেলা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এ প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গা নেতারা। দু’দশকেরও বেশি সময় আগে থেকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শুরু করে। সম্প্রতি এ অঞ্চলের মানবপাচার সংকট সামনে আসার পর তাদের দুর্দশা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ১৯৯২ সাল থেকে সহায়তা করে আসছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তারা বলছে, এখানে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। ঠেঙ্গারচর সফরে গিয়ে সংস্থাটির এ ধারণার সঙ্গে একমত এএফপি। ঠেঙ্গারচরের উদ্দেশে রওনা হওয়া এএফপি’র প্রতিনিধিদলবাহী নৌকাটিকে পার্শ্ববর্তী দ্বীপ হাতিয়াতে আটকে দেয় পুলিশ। তারা জানায়, সেখানে সফরকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। তবে বনবিভাগের এক কর্মকর্তা এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, ‘জোয়ারের সময় পুরো দ্বীপটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেখানে বাস করা অসম্ভব।’ হাতিয়া দ্বীপ থেকে আনুমানিক ৩০ কিলোমিটার পূর্বে ঠেঙ্গারচরের অবস্থান। আনুমানিক ৮ বছর আগে সমুদ্র থেকে ভূখণ্ডটি জেগে ওঠে। গুগল ম্যাপেও এর অস্তিত্ব দৃশ্যমান নয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মওসুমি মাসগুলোতে সেখানে পৌঁছানো অসম্ভব। এ সময় সমুদ্রের রূপ থাকে ভয়ঙ্কর। দ্বীপটি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মূল ভূখণ্ড থেকে স্পিডবোটে দ্বীপটিতে যেতে আনুমানিক দু’ঘণ্টা লাগে। যে এলাকাটিতে এর অবস্থান সেখানে নিয়মিত আঘাত হানে সাইক্লোন। অতীতে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে ও হাতিয়ায় হাজারো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। হাতিয়ার শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা এএইচএম মঈনউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো সরকারি পরিদর্শকদের একটি দল এসে দ্বীপটিকে বাছাই করে গেছে। তিনিও স্বীকার করলেন, এ দ্বীপে হাজারো মানুষকে স্থানান্তর করা চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে তিনি মনে করেন, সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র, একটি ব্যারেজ ও একটি হাসপাতাল নির্মাণ করলে জায়গাটিকে বসবাসযোগ্য করার জন্য যথেষ্ট।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের ১৩ লাখ রোহিঙ্গার বেশির ভাগেরই কোন নাগরিকত্ব নেই। মিয়ানমার তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী মনে করে যদিও তারা কয়েক প্রজন্ম ধরে সেখানে বাস করে আসছে। আর বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে যারা রয়েছে তাদের শরণার্থী মর্যাদা রয়েছে। তারা জাতিসংঘ থেকে সহায়তা পায়। অর্থাৎ, খাবার, আশ্রয় আর অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন অন্তত তারা বাংলাদেশে পেয়ে থাকেন। বনবিভাগের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আশেপাশে আরও দ্বীপ রয়েছে যেগুলো মানুষের জন্য বসবাসযোগ্য। কিন্তু যে দ্বীপটি সবসময় জোয়ারে প্লাবিত হয় সেটাকেই কোনভাবে পুনর্বাসন স্থান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.